আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ারের লাইফ সাপোর্টে ডাক্তার ও নার্সের অবহেলায় রোদবা নামে দেড় বছর বয়সী এক শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানিয়ে তাকে আইসিইউ থেকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। এর পরপরই রোদবা মারা যায়।
পরিবারের দাবি, লাইফ সাপোর্টে দেওয়ার পর ওখানে কোনো ডাক্তার ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে রোদবার মৃত্যু হয়েছে। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মৃত্যুর খবর তারাই জানান।
রোদবা ঝাউতলা এলাকার ব্যবসায়ী টিংকু ও আয়েশা খানের একমাত্র সন্তান।
আরও পড়ুন : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুর মৃত্যু—অবহেলার অভিযোগ ডাক্তার-নার্সের বিরুদ্ধে
রোদবার মামা রাজু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হলে আমার ভাগ্নি রোদবাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তারপর ডাক্তারের পরামর্শে তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। আজকে দুপুরে রক্ত দিতে হবে জানালে রক্তও ম্যানেজ করা হয়। দুপুরে হঠাৎ খবর দেয়, রোদবার শারীরিক অবস্থা ভালো না। তাকে ইনটেনসিভ কেয়ারে লাইফ সাপোর্টে রাখা হচ্ছে।
দুপুর ১টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর লাইফ সাপোর্টে রোদবাকে দেখতে যান তার বাবা। যাওয়ার পর রোদবার রক্ত কেন চলছে না নার্স থেকে জানতে চাইলে, নার্স কিছু বলতে পারেনি। তখন লাইফ সাপোর্টে দায়িত্বরত কোনো ডাক্তারও ছিল না। ডাক্তারকে খবর দিলেও কেউ আসেনি। তারপর আমার এক আত্মীয় ডাক্তার দেখে জানান, রোদবা প্রায় তিন ঘণ্টা আগে মারা গেছে।
তিবি আরও জানান, আমার ভাগ্নি মারা গেলেও ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না। তাদের অবহেলার কারণে আজ আমার ভাগ্নি মারা গেছে। তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে। লাইফ সাপোর্টের মতো একটা ইউনিটে কোনো ডাক্তার নাই। কোনো নার্সও ছিল না। পরে খবর দিলে নার্স আসলেও কোনো ডাক্তার আসেনি। সবাই পালিয়ে যায়। লাশ আনার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে বকেয়া বিলও নেয়নি। সবাই যার যার মতো লুকিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বিল না দিয়েই আমরা লাশ নিয়ে চলে আসি।
নিহতের বাবা টিংকু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলায় আমার একমাত্র সন্তান রোদবার মৃত্যু হয়েছে। আমার মেয়েকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর দেখতে গিয়ে জানতে পারি- মেয়ে আর নেই। তখন লাইফ সাপোর্টে দায়িত্বরত কোনো ডাক্তার ও নার্স ছিল না। পরে নার্স ডেকে আনলেও সে কিছু বলতে পারেনি। মেয়ের মৃত্যুর খবর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমরাই দিয়েছি।
থানায় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা থানায় অভিযোগ করিনি। অভিযোগ করে কী হবে? মেয়েকে তো আর ফিরে পাবো না। আমি একটাই কথা বলবো, চিকিৎসকের অবহেলায় আর কোনো মা-বাবার বুক যেন খালি না হয়।
যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক নূরুল হুদা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগটি পুরোটাই মিথ্যা। আইসিইউ বা লাইফ সাপোর্টে ডাক্তার থাকে না, এটা কখনও হতে পারে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন। একজন রোগীকে তখন লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় যখন তাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হয়। সেখানে তো রোগীর মৃত্যু হতে পারে। রোগীর মৃত্যু হলেতো সব দোষ চিকিৎসকের কাঁধে তুলে দেওয়া যায় না। চিকিৎসকদের প্রতি এমন মিথ্যা অভিযোগ রটালে মানুষ তাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। ডাক্তাররা জীবনের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে একজন মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু হলে আমাদের অভিযোগ করতে পারতো। অভিযোগ না করে তারা অশ্লীল ব্যবহার ও উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসকের গায়ে হাত তুলবে- এটাতো হতে পারে না। চিকিৎসকদের অবহেলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।
বকেয়া বিল না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিল নেওয়া হয়নি- সেটা মিথ্যা কথা। আমরা যখন বিল চেয়েছি তখন তারা উত্তেজিত হয়ে গালাগালি করে বিল না দিয়ে চলে গেছে।