ব্যাংকের চেয়েও এনজিওতে বেশি সঞ্চয় করে নগরের মানুষ! কারণ জানালেন বিশেষজ্ঞরা

ব্যাংকের চেয়েও নগরের মানুষ সঞ্চয় বেশি করে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওতে। একইভাবে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও নগরের মানুষের পছন্দের শীর্ষে এনজিও।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ শীর্ষক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ফল প্রকাশ করেছে সরকারি এ সংস্থাটি।

জরিপে দেখা যায়, নগরের ঋণগ্রহীতার ৬৪ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ ঋণ করেন এনজিও থেকে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নেন মাত্র ০ দশমিক ৭৯ শতাংশ মানুষ।

ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পছন্দ বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী। এদের কাছ থেকে ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষ ঋণ নেন।

অপরদিকে সঞ্চয়ের জন্য ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ এনজিওতে টাকা রাখেন। পক্ষান্তরে ব্যাংকে টাকা রাখেন ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ।

আরও পড়ুন: ‘সুখবর’—বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন প্রজ্ঞাপনে ফায়দা পাবেন গ্রাহকরা

নগরের ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে, ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কর্মদাতা থেকে, ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ মহাজন থেকে এবং ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নেন।

বিবিএস জানায়, নগরে বসবাসকারী ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীকে সঞ্চয় ও ঋণে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও ব্যাংকের মতো উৎসকে ছাপিয়ে প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রাখছে এনজিওগুলো।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া সঞ্চয়কারীর হার ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গড়ে ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যবহার করেন এনজিও। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম নগরের ৪৭ দশমিক ২৭ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যাংকে টাকা রাখেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম নগর ছাড়া অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যাংক ব্যবহার করেন। গড়ে ব্যাংকে সঞ্চয় করেন ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ।

দেশের সব নগরের ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ মানুষ নিজ ঘরে সঞ্চয় রাখেন। বিমা কোম্পানির কাছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, পোস্ট অফিস ও সমবায় সমিতির কাছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানের প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় করেন।

আরও পড়ুন: ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে ধরা খেলেন ব্যাংক ম্যানেজার—রাজস্ব কর্মকর্তা

ব্যাংকের চেয়ে এনজিও থেকে বেশি ঋণের বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।তাঁদের মতে, নগরে বস্তিবাসীর সংখ্যা বেশি। এনজিওগুলো তাদের নিয়ে কাজ করে। এ কারণে এনজিও থেকেই বেশি ঋণ নেন নগরবাসী। তাছাড়া এনজিও থেকে ঋণ নিতে ব্যাংকের মতো ঝামেলাও পোহাতে হয় না।

ব্যাংকের চেয়ে এনজিওতে বেশি মানুষের টাকা জমানোর বিষয়টিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, অনেক মানুষ, বিশেষ করে স্বল্প শিক্ষিত ও দরিদ্র মানুষ ‘যোগ্যতা’ না থাকার ভয়ে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে যান না। কিন্তু এনজিওগুলো নিম্ন আয়ের মানুষদের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় এক্ষেত্রে কোনো ভয় কাজ করে না। তারা সহজেই এনজিওতে টাকা জমা রাখেন।

জানা যায়, দৈবচয়নের ভিত্তিতে দুই হাজার ১৫০টি খানার (পরিবার) ওপর জরিপ করে বিবিএস। জরিপ এলাকা ছিল চট্টগ্রাম, ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!