চট্টগ্রামের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র ফয়’স লেক। এর প্রবেশমুখেই আবাসিক হোটেলগুলোকে কেন্দ্র করে বাড়ছে নানা অপরাধ। গেস্ট হাউসের নামে দিনদুপুরে চলছে অসামাজিক কাজ। রয়েছে মাদকের আসর বসার অভিযোগও। এছাড়া হোটেল স্টাফ ও মাদকসেবীরা সড়কে চলাচল করা নারীদের প্রতিনিয়ত ইভটিজিং ও হয়রানি করেন।
ইউনিভার্সিটি অব সাইয়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিসি) এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া জাহান (ছদ্মনাম) জানান, তিনি থাকেন আনসার ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের পেছনের একটি ফ্ল্যাটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ায় প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয় ফয়’স লেক প্রবেশমুখের সড়কটি। চলাচলের সময় হোটেল কর্মচারী ও মাদকসেবীদের মাধ্যমে নানাভাবে ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। মেয়ে দেখলেই অশ্লীল ভাষায় টিজ করে হোটেল কর্মচারীরা। এদের বিরুদ্ধে পুলিশকে বললেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
আরও পড়ুন: সিটি করপোরেশন একদিনে উচ্ছেদ করল দুই শতাধিক দোকান—স্থাপনা
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফয়’স লেকের প্রবেশমুখের পূর্ব পাশে রাজবাড়ী গেস্ট হাউস, রূপসী বাংলা গেস্ট হাউস, ঐশি গেস্ট হাউস, হোটেল আপন নিবাস, হোটেল সিক্স স্বর্ণালী’ নামে পাঁচটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া ‘রাজার হাল কফি হাউস’ নামে রয়েছে আরও একটি মিনি হোটেল। প্রতিটি গেস্ট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪/৫ জন লোক। তারা ওই সড়কে যাতায়তকারী প্রতিটি পুরুষকে উপরে যাওয়ার আহ্বান করছেন। বলছেন, ভেতরে সুন্দরী নারী রয়েছে। এখানে পুলিশের কোনো ঝামেলা নেই, চাইলে আপনিও (পথচারীরা) অল্প টাকায় যেতে পারেন।
পরিচয় গোপন রেখে রূপসী বাংলা গেস্ট হাউসের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে, চারজন তরুণী ছোট ছোট ড্রেস পড়ে অপেক্ষা করছেন। বেশকিছু খদ্দরের আনাগোনাও দেখা গেছে সেখানে। এ সময় ম্যানেজার (মিজান) প্রতিবেদককে অফার দিয়ে বলেন, দাদা আপনি যাবেন? একবার গেলে ৫০০ টাকা। চাইলে যে কাউকে নিয়ে যেতে পারেন আপনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফয়’স লেকের প্রবেশমুখে সড়কের পূর্ব পাশের ছয়টি হোটেল খুলশী থানা এলাকায় অবস্থিত। মূল গেট থেকে সামান্য ঢুকতেই মসজিদের পাশে রাজবাড়ী গেস্ট হাউসের মালিক হানিফ। মহিউদ্দিন নামের এক যুবক আছেন সেখানে ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া ‘রূপসী বাংলা গেস্ট হাউসের মালিক নুরুল আবছার। সেখানকার ম্যানেজার মিজানুর রহমান। এর একটু পরে থাকা ঐশি গেস্ট হাউসের মালিক ফরিদ প্রকাশ ডিবি ফরিদ (ডিবি পুলিশে ছিলেন)। আরেকটু সামান্য রাজার হাল কফি হাউস। এর পাশেই হোটেল সিক্স স্বর্ণালী, যার মালিক হোসেন। এসব হোটেলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চলে পতিতাবৃত্তি ও মাদকের আসর।
আরও পড়ুন: স্যামসাং থেকে বাটা কেউই মানেনি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি নির্দেশনা
আব্দুস সালাম নামের এক ভুক্তভোগী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ১৫/২০ দিন আগে হোটেল বয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ঢুকেছিলাম রাজা গেস্ট হাউসে। সেখানে সামন্য বিষয় নিয়ে কর্মচারীর সঙ্গে তর্ক হলে তারা পুলিশকে ফোন দেয়। তখন পুলিশ এসে আমাকে আটকে রাখে। পরে এক বন্ধুর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা এনে পুলিশকে দিয়ে কোনোরকম রেহাই পাই।
তিনি আরও বলেন, পরে জানলাম এসব হোটেল থেকে খুলশী থানাকে মাসোহারা দেওয়া হয়। এজন্য এখানে দিনদুপুরে মাদকের আসর ও পতিতাবৃত্তি চললেও তাদের বিরুদ্ধে নীরব পুলিশ।
এ বিষয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত হোটেল মালিক নুরুল আবছার পতিতাবৃত্তির কথা স্বীকার করলেও মাদকের আসর বসার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পতিতাবৃত্তি এখানকার প্রত্যেক হোটেলে চলে। বিষয়টি পুলিশও জানে। আপনাদের মতো অনেক সাংবাদিকও এসব বিষয়ে অবগত।
যোগাযোগ করা হলে অসামাজিক কাজের কথা স্বীকার করে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ চাকমা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এসব হোটেলে আমরা প্রায় অভিযান পরিচালনা করি। ৩/৪ দিন আগেও তিনজনকে আটক করেছি। এসব বন্ধ করতে এলাকাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে নারীদের ইভটিজিং ও হয়রানির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।