বন্ধু তুই কেমন আছিস…

এ যে কতদিন পর দেখা! বছর দেড়েকের চাইতেও বেশি। কতদিন দেখিনি তোমায়…। ২০২০ এর মার্চে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল খুলল ২০২১ এর সেপ্টেম্বরে। দেড় বছর পর প্রিয় বন্ধুটিকে দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) এমনই দৃশ্য দেখা গেল স্কুলে স্কুলে।

স্কুলের গেটে ঢুকতেই দৌঁড় দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাওয়া, বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস, হাতে হাত রেখে ঘুরাঘুরি– সবমিলিয়ে স্কুলশিক্ষার্থীদের রোববারের সকালটা কেটেছে অন্যরকম।

নগরের জামালখান এলাকায় ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মর্নিং শিফটের ক্লাস শুরুর আগেই অভিভাবকের সঙ্গে স্কুল প্রাঙ্গণে এসে হাজির হয় শিক্ষার্থী মারিয়া তাবাসসুম। রিকশা থেকে নেমেই সে এক দৌড়ে চলে গেলে স্কুলের ভেতর। রিকশার ভাড়া মেটাতে মেটাতে মারিয়ার মা তাকে ডাকলেও সাড়া দেওয়ার মতো অপেক্ষাটুকুও যেন করতে চাইছিল না এই ক্ষুদে শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে করোনা : স্কুল-কলেজ খোলার দিনে ‘বড়’ খবর

শুধু মারিয়া নয়, এরকম শত শত শিক্ষার্থী বহুদিন পর প্রিয় বন্ধুকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে। সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আরিফ, কায়েস, ইরাজসহ আরও কয়েকজন। কিছুক্ষণ আগেই স্কুল প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছেছে তারা। একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল চার-পাঁচ বন্ধু। একজন শিক্ষক প্রবেশ করতেই দেখা গেল সবাই মিলে একসঙ্গে ছুটে এলো। পায়ে ধরে কদমবুসি করছে একে একে।

সে সময় দূর থেকে আরও কয়েকজনকে দেখা গেল স্যারের দিকেই এগিয়ে আসতে। স্যারও সবার কুশল জানতে চাইলেন হাসিমুখে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ না করলেও প্রিয় শিক্ষার্থীদের দেখতে পেয়ে শিক্ষকরাও কম আনন্দিত নন।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে রোববার থেকে। শারীরিক উপস্থিতিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগে থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করার নির্দেশনা ছিল। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। শ্রেণি কার্যক্রম প্রস্তুতি ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বরণ করতে সাজানো হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিকক্ষ।

আরও পড়ুন: স্কুল-কলেজের দুয়ার খুলছে—মানতে হবে ৮ নির্দেশনা

গত কয়েকদিন ধরেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছিল সাজ সাজ রব। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের আগমন উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। বিশেষ করে দুই শিফটের স্কুলগুলোতে সকাল ৮টার আগেই শিক্ষার্থীরা নতুন স্কুলড্রেস পরে অভিভাবকের হাত ধরে উপস্থিত হতে দেখা গেছে।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী একটি রুটিনও প্রণয়ন করা হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী, রোববার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে বিষয়টি না জেনে অন্য শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থীকেও স্কুলে চলে আসতে দেখা গেছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য আমরা বেশ মকিছু নির্দেশনা দিয়েছি। সেসব বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখতে গত এক সপ্তাহ ধরে মনিটরিং কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল ফটক দিয়ে সারিবদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করানো বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে শৃঙ্খলা বজায় রেখে যাতে সব শিক্ষার্থীকে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করানো হয়, সেজন্য দিকনির্দেশনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে স্কুল-কলেজ, যে শ্রেণির ক্লাস যেভাবে চলবে

তিনি বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি শুধু করোনায় আপৎকালীন সময়ের জন্য নয়। পরবর্তীতে শৃঙ্খলভাবে যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম করানো হয়, সেটি স্থায়ীকরণে সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও এসব নির্দেশনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুসরণ করা হবে।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm