স্কুল-কলেজের দুয়ার খুলছে—মানতে হবে ৮ নির্দেশনা

আবারো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হতে চলেছে শিক্ষাঙ্গন। দীর্ঘ ছুটি শেষে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে সারাদেশে খুলছে স্কুল-কলেজ।

এদিকে স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন ‘উচ্ছ্বাস’ রয়েছে তেমনি রয়েছে উৎকণ্ঠাও। নগরে করোনার বর্তমান অবস্থা কিছু নিয়ন্ত্রণে হলেও স্কুলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আনাগোনা হয়ত স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি যাতে না বাড়ে তাই ৫ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর

এদিকে সারাদেশের মতো নগরের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ শেষ করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেইজে শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস, রুটিন দিয়ে দিয়েছে। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের স্কুলের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়েছে নির্দেশনা ও সূচি।

আরও পড়ুন: ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে স্কুল-কলেজ, যে শ্রেণির ক্লাস যেভাবে চলবে

ডা. খাস্তগীর সরকারি স্কুল পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক

শনিবার (১১ আগস্ট) সকালে নগরের জামালখানের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ডিসি হিল সংলগ্ন ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওমর ফারুক, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পীষুষ দত্ত, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনএম জিয়াউল হায়দার হেনরী, কোতোয়ালী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. হারুন-উর রশীদ, সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (কোতোয়ালী) লিপি গোপ, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিদা আক্তার, সরকারি ন্যাশনাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ বদরুন্নেছা।

পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত দেড় বছর বন্ধ ছিল। যেহেতু সংক্রমণ ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে সেজন্য আগামীকাল রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষার্থীরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবে। এজন্য মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করে দিয়ে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখার পাশাপাশি স্যানিটাইজ করা হয়েছে। বাথরুম পরিস্কারসহ শ্রেণি কক্ষগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্কুলের সামনে ওয়াশ ব্লক স্থাপন করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে স্যানিটাইজ করে স্কুলে বা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারে। স্কুলের বেঞ্চগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে। প্রত্যেকে মাস্ক পরিধান করবে এবং শারীরিক  দূরত্ব বজায় রেখে প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসবে। যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে আমরা আশা করছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবেন।

আরও পড়ুন: করোনা : স্কুল-কলেজ খুললেও ক্লাস হবে সপ্তাহে ১ দিন

ডা. খাস্তগীর সরকারি বিদ্যালয় পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, স্কুল খোলার ঘোষণা পাওয়ার পর নগরের ২১৫টিসহ জেলার মোট ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পাঠদানের উপযোগী করে তোলা হয়েছে।

এদিকে শনিবার নগরের ঐতিহ্যবাহী কলেজিয়েট স্কুলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেখা গেছে কর্মচারীদের। তারা বিদ্যালয়ের দেয়াল থেকে শুরু করে দরজা, টেবিল, চেয়ার ভালো করে মুছে পরিষ্কার করছেন। সেই সঙ্গে নির্দেশনা অনুসারে সব ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

নাসিরাবাদ হাউজিংয়ে অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ও প্রস্তুত পাঠদান করানোর জন্য। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে আসনবিন্যাস থেকে শুরু করে কখন কার ক্লাস হবে, কোন রুমে হবে- সকল সূচি দিয়েছে।

এ স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মেহেদী হাসান বলেন, ‘রোববার থেকে স্কুল শুরু হচ্ছে। স্কুলের ফেসবুক পেজ থেকে জেনে নিয়েছি ক্লাসের সূচি।’

অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল কুমার দত্ত আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা শতভাগ মেনে আমরা প্রস্তুত। দীর্ঘদিন পর যেহেতু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসবে তাই তাদের স্বাগত জানানো হবে।

আরও পড়ুন: করোনা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বেড়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে নতুন সিদ্ধান্ত

কলেজিয়েট সরকারি স্কুলের দরজা পরিষ্কারে ব্যস্ত কর্মচারীরা। ছবি : বাচ্চু বড়ুয়া

৮ নির্দেশনা

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ৮টি নির্দেশনা জারি করেছে। এসব নির্দেশনা হলো-

১. ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে।

২. প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন প্রতিষ্ঠানে আসবে।

৩. সপ্তায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস হিসাব করে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুটিন তৈরি করবে।

৪. রুটিনের সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ক্লাস নির্ধারণ করা যেতে পারে।

৫. যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান ওইসব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো সমন্বয় করে রুটিন করবে।

৬. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান ডিগ্রি, সম্মান ও মাস্টার্স পরীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে ২০২১ ও ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য রুটিন প্রণয়ন করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

৭. রুটিন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ, প্রস্থান ও অবস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মতো ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৮. রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!