দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্যাং লিডার মামুন, ব্যবসায়ী নেতাকেও মৃত্যু পরোয়ানা

গ্যাং লিডার মামুন। পুরো নাম  তারেকুল ইসলাম মামুন। পরিচয় দেন ‘নগর যুবলীগ নেতা’। তবে নগর যুবলীগের সদস্য খাতার কোথাও তার নামগন্ধ নেই।

শুরুতে মামুনের রাজত্ব ছিল চসিকের ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডে। এখন সেই রাজত্ব বিস্তৃত হয়েছে বাকলিয়া হয়ে কল্পলোক আবাসিক এলাকায়ও। কোথাও থেমে নেই তার বাহিনীর অপকর্ম। কথায় কথায় হুমকি তার জন্য মামুলি ব্যাপার। মারধর এবং চাঁদাবাজিও কোনো ব্যাপারই নয়। পুলিশও নাকি তার হাতের মুঠোয়। কে বাঁধা দেয় তাকে? কারণ আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীরের ছায়ায়—মায়ায় কাটছে তার দিনরাত।

এটি কোনো গল্প নয়। মামুনের কথা শুনলেই বক্সিরহাট, বাকলিয়া ও কল্পলোক আবাসিকের মানুষের ঘুম উড়ে যায়। তার দলবল দাপিয়ে বেড়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়ে রাত—গভীর রাতেও। ডাক দেওয়ারও কেউ নেই। ভুলে কেউ তাকালে বিপদ তার পিছু ছাড়ে না। আইনের আশ্রয় নিলেও বিপদ। থানায় জিডি করতে গিয়ে মেলে হত্যার হুমকি। এটাই এখানকার হালের চিত্র।

এদিকে মামুনের আধিপত্য বিস্তারে বাঁধা দেওয়ায় চুরির মামলায় ফাঁসানো হয়েছে এক ব্যবসায়ী নেতাকে। তাঁকে দেওয়া হচ্ছে হত্যার হুমকিও। এ অবস্থায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার (১৮ জুলাই) রাতে কোতোয়ালী থানায় জিডি করেছেন মেসার্স শাহ্ ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী শামসুদ্দিন সিদ্দিকী।

জিডিতে শামসুদ্দিন উল্লেখ করেন, দোকানের কর্মচারী শুক্কুর আলম জুয়েলসহ আমি গত ১৫ জুন দুপুর ১টার দিকে আদালত থেকে ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে আসছিলাম। নতুন আদালত ভবনের গারতখানা ও ক্যান্টিনের সামনে এলে আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালান মামুনসহ অজ্ঞাত দুজন। আমাদের লাথি-ঘুষি মেরে তারা মাটিতে ফেলে দেয়। গায়ের পাঞ্জাবি টেনে ছিঁড়ে ফেলেন। একপর্যায়ে আশপাশের মানুষ জড়ো হতে থাকলে তারা পালিয়ে যায়।

জানা যায়, কথিত যুবলীগ নেতা মামুন আছাদগঞ্জ এলাকার সোহেল ও বাকলিয়া এলাকার আবুল কালাম রশিদের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বাকলিয়া এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ী নেতা শামসুদ্দিন সিদ্দিকী।

পথের কাঁটা দূর করতে শামসুদ্দিন ফাঁসানোর ছক করেন মামুন, আবুল কালাম রশিদ ও তার বোন রুনা আক্তার। শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় দায়ের করা হয় মামলা। যার বাদী রশিদের বোন রুনা। ওই মামলায় গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) জামিনের আবেদন করলে আদালত শামসুদ্দিনকে জামিন দেন।

আরও জানা যায়, ব্যবসায়ী নেতা শামসুদ্দিন মিথ্যা মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও এবার তাঁকে দেওয়া হচ্ছে হত্যার হুমকি। যেকোনো সময় তাঁকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন কথিত যুবলীগ নেতা মামুন। মায়ের কাছ থেকে ক্ষমা ও দোয়া চেয়ে শামসুদ্দিনকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে ফোনে বলেন মামুন।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নেতা শামসুদ্দিন সিদ্দিকী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আছাদগঞ্জের কথিত যুবলীগ নেতা তারেকুল ইসলাম মামুন একজন ভয়ঙ্কর গ্যাং লিডার। তার ৪০-৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে আছাদগঞ্জ ও বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখলসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। আমি এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। কিন্তু জামিনের পর থেকে মামুন দোকানে গিয়ে এবং ফোনে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত রোববার কোতোয়ালী থানায় জিডি করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নিজের জীবন ও পরিবারের নিশ্চয়তা নিয়ে এখন চিন্তায় আছি। মামুন আমার ভাইকেও বারবার ফোন দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী মামুনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। না হলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দীন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মামুনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য শামসুদ্দিন সিদ্দিকী নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হত্যার হুমকি দেন। এমন অভিযোগে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন ব্যবসায়ী শামসুদ্দিন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm