যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কোভ্যান্সের মাধ্যমে পঁচিশ লাখ ডােজ মডার্না এবং চীন থেকে বিশ লাখ ডােজ সিনোফার্ম (Verocell) ভ্যাকসিন (করোনার টিকা) ইতোমধ্যেই পৌছে গেছে বাংলাদেশে।
শিগগির সারাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) ও সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট টিকাদান কেন্দ্রগুলাের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে কারা-কীভাবে মডার্না ও সিনোফার্মের করোনার টিকা পাবেন সে সম্পর্কে বেশকিছু নির্দেশনার কথা জানানো হয়। নির্দেশনাগুলো হলো-
ভ্যাকসিন বিতরণ
(১) ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকার নির্দিষ্ট টিকাদান কেন্দ্রে (ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল) মডার্নার টিকা দেওয়া হবে।
(২) সব জেলা ও উপজেলায় সিনােফার্ম (Verocell) টিকা দেওয়া হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ টিকা নিতে পারবেন না।
অগ্রাধিকার পাবেন যারা
(১) ৩৫ বছরের উর্ধ্বে সব সাধারণ জনগােষ্ঠীকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে। রেজিস্ট্রেশনকারীদের মধ্যে বেশি বয়সী জনগােষ্ঠী থেকে ক্রমান্বয়ে কম বয়সী জনগােষ্ঠীকে পর্যায়ক্রমে এসএমএস প্রদানের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হবে।
(২) বীর মুক্তিযােদ্ধা ও বীরাঙ্গনা
(৩) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়- যেমন মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, বিচারিক ও প্রশাসনিক কার্যালয়গুলোর কর্মকর্তা)
(৫) প্রতিরক্ষা কাজে নিয়ােজিত সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ইত্যাদি বাহিনীর সদস্য, কোস্টগার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট
(৬) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার-ভিডিপি
(৭) কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী (চিকিৎসক, সেবিকা ও মিডওয়াইফ, এসএসিএমও, অল্টারনেট মেডিকেল কেয়ার, হােমিওপ্যাথি, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনােলােজিস্ট, ল্যাবরেটরি এটেনডেন্ট, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ড বয়/আয়া, ধােপা, টিকেট ক্লার্ক, কুক-মশালচি, পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কর্মী,
ফিজিওথেরাপিস্ট, অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং অন্যান্য সরাসরি সম্পৃক্ত সেবাদানকারী)
(৮) আইনজীবী (বার কাউন্সিল কর্তৃক অনুমােদিত)
(৯) গণমাধ্যমকর্মী
(১০) জনসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী
(১১) ধর্মীয় প্রতিনিধি
(১২) মৃতদেহ সৎকার কার্যে নিয়ােজিত ব্যক্তি
(১৩) জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী
(১৪) নৌ-বন্দর, রেল স্টেশন ও বিমান বন্দরগুলোতে কর্মরত ব্যক্তি
(১৫) মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলাগুলোতে আবশ্যকীয় জনসেবায় নিয়ােজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী
(১৬) নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব মানুষ আগে নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ডােজ টিকাও পাননি তাদেরকে টিকা প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে।
(১৭) যাদেরকে আগে এসএমএস পাঠানাে হয়েছিল, কিন্তু কোনো কারণবশত টিকা নিতে পারেননি, তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে ক্রমান্বয়ে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের টিকা দিতে হবে।
(১৮) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী (জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরাে কর্তৃক অনুমােদিত রেজিস্ট্রেশনকৃত)
(১৯) সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী
(২০) সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস এবং সরকারি আইএইচটি-এর শিক্ষার্থী
(২১) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী)
(২২) জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্প কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী
(যেমন- পদ্মাসেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি)
(২৩) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী (যারা আগে ভ্যাকসিন নেননি)
(২৪) ৫৫ বছরের উর্ধ্বে FDMN জনগােষ্ঠী
(২৫) কৃষক, শ্রমিক
(২৬) সৌদি আরব ও কুয়েতগামী প্রবাসী শ্রমিকদের ফাইজার টিকা দিয়ে ভ্যাকসিনেশনের জন্য নির্ধারিত সাতটি কেন্দ্র সংরক্ষিত থাকবে। এ পর্যায়ে এসব কেন্দ্রে অন্যান্যরা রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না। কেন্দ্রগুলো হলো-
১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
২, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
৩. স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
৪. শেখ রাসেল গাস্ট্রো-লিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
৫. শহীদ সােহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
৬, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
৭. মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
(২৭) সৌদি আরব ও কুয়েত ছাড়া অন্যান্য দেশের প্রবাসী শ্রমিকরা উল্লিখিত সাতটি নির্দিষ্ট কেন্দ্র ছাড়া অন্য কেন্দ্রে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন।
(২৮) বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হয়ে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে টিকার আওতায় আসবে।
বিশেষ নির্দেশনা
১. ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি কেন্দ্রে একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে।
২. ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র প্রতিদিন (শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত খােলা থাকবে।
৩, ভ্যাকসিন গ্রহীতার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বুথ চালু করতে হবে (যেমন: ১৫০-২০০ জনের জন্য ১টি বুথ, ২০০ জনের বেশি হলে দুটি বুথ চালু করতে হবে)।
৪. প্রতিটি বুথে দুইজন ভ্যাকসিনেটর ও তিনজন ভলান্টিয়ার থাকবেন।
৫. প্রথম ডােজ ভ্যাকসিন দেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডােজ দিতে হবে।
৬. প্রতিটি ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট মেডিকেল টিম থাকতে হবে যাদের AEFL ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতি থাকবে।
৭. কেন্দ্রের ফোকাল পারসন সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন।
৮, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রচার-প্রচারণা করবেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযােগে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়।
জেডএইচ