৯৩৬ কোটি টাকা মেরে জেলেই থাকতে হচ্ছে নুরজাহান গ্রুপের পরিচালক টিপুকে

অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে কারাবন্দী নুরজাহান গ্রুপের পরিচালক টিপু সুলতানকে। একইসঙ্গে আরেক পরিচালক কানাডা পলাতক জহির আহমেদ রতনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউর করিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অগ্রণী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ৯৩৬ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭৩ টাকা আদায়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের অবেদন করলে আদালত মঞ্জুর করে ৫ মাসের আটকাদেশ দেন। তবে টিপু কারাগারে থাকায় আদালতের নির্দেশে তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে খেলাপি ঋণের টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া আদালতে উপস্থিতির জন্য পত্রিকায় নোটিশ দেওয়া হলেও আসামিরা আসেননি।

জানা যায়, ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি নুরজাহান গ্রুপের পরিচালক টিপু সুলতানকে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে রাজধানীর গুলশান থানা পুলিশ। পরদিন নগরের খুলশী থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন : ৪০০০ কোটি টাকা মেরে গা ঢাকা, চট্টগ্রামের নুরজাহান গ্রুপের টিপু ধরা খেল গুলশানে

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর সাউথইস্ট ব্যাংকের ৪৬৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭০ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বাকি পাঁচজন হলেন- জহিরের স্ত্রী মনোয়ারা প্রকাশ তাসমিন আহামেদ, ভাই টিপু সুলতান ও জসিম উদ্দিন, ইফতেখার আল-জাবের এবং ফরহাদ মনোয়ার। তাদের বিরুদ্ধে ৫ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৬৮ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৪৫২ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কানাডায় টাকা পাচারকারী ধনকুবের জহির আহমেদ রতন এবং তার ভাই ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন অর্থঋণ আদালত।

জানা গেছে, নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে এমডি জহির আহমদ রতন ও তার দুভাইয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। রতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ১৫টি মামলা আছে। এ কারণে আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাছাড়া বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তার কোনো হদিস পায়নি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা ঋণ নেয় জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখা থেকে। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় তা সুদ ও দণ্ড সুদসহ ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দাঁড়ায়। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পাওনা আদায়ের জন্য ৫ মাসের কারাদণ্ড দেন অর্থঋণ আদালত।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংক জুবিলী রোড শাখা নুরজাহান গ্রুপের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ৪০ কোটি টাকা।

জহির আহমদ রতন মেসার্স আহমদ ট্রেডার্সের নামে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ ঘটনায় ২০২০ সালে মামলা করা হয়। ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় বাদীপক্ষ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন। আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

রতনের স্ত্রী-সন্তান বসবাস করেন কানাডায়। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমদ রতনের পাসপোর্ট জব্দ ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!