ঘরের দরজা আটকে দিয়ে ‘হিংসার আগুন’—পুড়ল মা-ছেলে

হিংসার আগুনে শরীরের ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে মিধু দে’র (৬০)। ছেলে বিজয় দে‘র গায়ের কিছু অংশও পুড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঘরে আগুন লাগলে কে বা কারা বাইরে থেকে তাদের দরজায় খিল আটকে দেয়। এতে প্রাণে বাঁচতে জানালা ভেঙে মা মিধু দে-কে (৬০) নিয়ে বেরিয়ে আসেন বিজয় দে (২৯)।

ঘটনাটি ঘটেছে বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদি বণিকপাড়ায়। হিংসার এ আগুনে তিনটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন : বাকলিয়ায় হঠাৎ আগুনে পুড়েছে ২ নারী

শুক্রবার সকালে মিধু দে-কে বাঁশখালী হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে বাম হাত ও পেটে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে আবারো বাড়ি নিয়ে আসে ছেলে বিজয়। আর্থিক সংকটের কারণে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রাখা হয়েছে বৃদ্ধা মিধুকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, দগ্ধ মিধু দে বণিকপাড়ার এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আছেন। তাঁর পুরো শরীরে ফুলা এসে গেছে। মুখমণ্ডলের পোড়া অংশ খোলা, বাম হাত ও পেটের পোড়া অংশে ব্যান্ডেজ করা আছে। হাসপাতালের দেওয়া প্রেসক্রিপশনে তাঁর শরীর ৯ শতাংশ পুড়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।
বিজয় দে বলেন, আমি সামান্য সেলুনের ব্যবসা করি। বাবাও পরিবারে ভরণপোষণ দেন না। আগুনে আমার দুই হাতে ফোসকা পড়েছে। মা গুরুতর আহত। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আর্থিক কষ্টে চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে বাঁশখালী নিয়ে এসেছি। মাকে কীভাবে বাঁচাব চিন্তায় আছি। শরীরে ফুলা এসে গেছে, খাবার খেতে পারছেন না। প্রশাসন ও বিভিন্ন ব্যক্তি সাহায্য করছেন। কিন্তু তা দিয়ে চট্টগ্রামে চিকিৎসা করার মতো সাহস পাচ্ছি না। তাছাড়া আমি শিক্ষিত নই, সবকিছু বুঝতে পারছি না। আমার মাকে বাঁচাতে চাই।

সুমন দাশ নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের পেছনের দেয়াল ভেঙে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন বলে জানান।

প্রতিবেশী শান্তি রাণী ধর বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন না এলে আমার পুরো ঘর পুড়ে যেত। তারপরও ঘরের ওপরের অংশ পুড়েছে।

বিজয় দে সরল ইউনিয়নের পাইরাং গ্রাম এবং সুমন দাশ পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রাম থেকে এসে ওই এলাকার সাবেক কাউন্সিলর গোপাল ধরের ভাড়া বাড়িতে থাকেন।

ফায়ার সার্ভিসের দলনেতা নুরুল মোস্তফা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আগুন লাগার বিষয়ে তদন্ত চলছে। এর আগে কিছু বলা যাবে না।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন এবং পৌরসভার মেয়র এস এম তোফাইল বিন হোসাইন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি এবং ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া দগ্ধ মিধুর সার্বক্ষণিক খবর রাখা হচ্ছে। তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ইউএনও।

উজ্জ্বল/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!