স্কুলের সামনেই ‘মৃত্যুফাঁদ’—পা ফসকালেই সর্বনাশ, নজর নেই সিটি করপোরেশনের

নগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাত এখন পরিণত হয়েছে ‘মৃত্যুফাঁদে’। পা ফসকালেই হতে পারে সর্বনাশ! তবে বারবার ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানানোর পরও সমস্যার সমাধান হয়নি। তবে কি দুর্ঘটনার ঘটনার পর সংশ্লিষ্টদের টনক নড়বে- এ প্রশ্ন স্থানীয়দের।

বুধবার (১০ আগস্ট) বেলা ১২টায় সরেজমিন স্কুল গেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, গেট থেকে বের হতে হাতের ডানদিকের ফুটপাতে লোহার তৈরি স্ল্যাবের তিনটির একটি উধাও। অন্য দুটির অবস্থাও বেহাল। ফুটপাতজুড়ে রাখা হয়েছে পানির জার। দুর্ঘটনা এড়াতে সেখানে একটি লাঠি লাল কাপড় দিয়ে রাখা হয়েছে। আর স্কুল ছুটির পর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই ‘মৃত্যুফাঁদটির’ পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসতর্ক হলেই ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা।

আরও পড়ুন :‘ভাড়া করা’ ১ শিক্ষকে চলে স্কুল—একসঙ্গে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস!

কথা হয় ওই ফুটপাতে বসা পান দোকানদার দুলাল আচার্য্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফুটপাতে লোহার তৈরি তিনটি স্ল্যাব ছিল। একটি নেই দীর্ঘদিন। রাতের অন্ধকারে মাদকেসেবীরা এই স্ল্যাবটি চুরি করে নিয়ে গেছে। আমি একবার বাধা দিতে গিয়ে তাদের আক্রমণের শিকার হয়েছি। স্ল্যাব না থাকার বিষয়টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো স্ল্যাবটি বসানো হয়নি। বসবে বসবে এমনটাই শুনছি। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ফুটপাতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিদিন।

স্কুল ছুটির পর ফুটপাত দিয়ে আসা কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী চিরঞ্জীব দে বলে, অনেকদিন ধরে ফুটপাতে স্ল্যাব নেই। বাকি যে দুটা আছে সেগুলোর ওপর হাঁটতে গিয়ে অনেকের পা ঢুকে পড়ে আঘাত পেয়েছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, ফুটপাতে স্ল্যাব না থাকার বিষয়টি বেশ কয়েকবার কাউন্সিলর মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন সেটি মেরামত করে দেওয়ার। স্ল্যাবটি তৈরির কাজ চলছে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কাতালগঞ্জ এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন। কাউন্সিলরকে জানিয়েই তারা দায় সেরেছেন। পরবর্তী আর কোনো পদক্ষেপ নেই। দুর্ঘটনা ঘটার পরই সকলের টনক নড়বে বলে মনে হচ্ছে।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে ৪০৪ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এদের মধ্যে বালক ২১১ ও বালিকা ১৯৩ জন। স্কুলের ক্লাস শুরু হয় সকাল ৯টায়। এক শিফট ছুটি হয় দুপুর ১টায়। দ্বিতীয় শিফট ছুটি হয় দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে।

জানতে চাইলে কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপন মল্লিক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ফুটপাতে লোহার তৈরি স্ল্যাবটি নেই এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। বিষয়টি আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানিয়েছি বেশ কয়েকবার। তিনি মেরামত করার আশ্বাস দিয়েছেন। দ্রুত সময়ে করা গেলে ভালো হতো। কারণ কখন কোন বিপদ ঘটে যায় এ নিয়ে শঙ্কায় আছি। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া রাতের অন্ধকারেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

স্কুলের সভাপতি বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনার (প্রতিবেদক) কাছ থেকে জানলাম। আমি আবারও কাউন্সিলর মহোদয়কে জানাব যাতে স্ল্যাবটি দ্রুত বসানো হয়। কারণ যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারবে না।

এদিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর দায় চাপালেন প্রকৌশল বিভাগের ওপর।

আরও পড়ুন: স্কুলের ছাদ থেকে বল আনতে গিয়ে ছাত্র ফিরল লাশ হয়ে

এ বিষয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সমস্যাটির বিষয়ে আমি জানি এবং বিষয়টি আমি প্রকৌশল বিভাগকে জানিয়েছে। তারা এসে দেখে গেছেন। কিন্তু তারা এতদিন কী করছেন আমার বোধগম্য নয়। স্ল্যাবটি তৈরি করা হয়েছে কিন্তু বৃষ্টির কারণে শুকায়নি এমনটাই প্রকৌশল বিভাগ আমাকে জানিয়েছে। আমি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) হেড অফিসে গিয়ে বিষয়টি আবারও অবহিত করব। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে স্ল্যাবটি বসে যাবে।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরও বলেন, আপনারা (প্রতিবেদক) তো মনে করেন কাউন্সিলররাই সবকিছু। কিন্তু সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয় অনেক আগে। প্যারেড মাঠের ফুটপাতে একটি স্ল্যাব ভাঙা ছিল। পরে আমি চিল্লাচিল্লি করে সেটি বসিয়েছি।

আলােকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!