‘ভাড়া করা’ ১ শিক্ষকে চলে স্কুল—একসঙ্গে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস!

বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্ব-চাম্বি মুসলিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকলেও তাঁরা ক্লাস নেন না। স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ‘ভাড়া করা’ শিক্ষক দিয়ে। দেড় হাজার টাকায় মাসিক সম্মানীতে ওই শিক্ষক একই কক্ষে ক্লাস নেন তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির!

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ে  শিক্ষকরা আসেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। কয়েক সপ্তাহ পরপর এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান নিয়োগপ্রাপ্ত  শিক্ষকরা। কিন্তু মাস শেষে নিচ্ছেন বেতনও।

আরও পড়ুন: ইউক্রেনের স্কুলে রাশিয়ার বোমা হামলা—৩০ জন বাঁচলেও নিহত ৬০

অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন- ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গুলজার বেগম এবং সহকারী শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা।

অভিযোগের সত্যতা জানতে সোমবার (১৩ জুন) সকাল ১১টায় বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রুমানা আক্তার নামের একজন শিক্ষিকা ক্লাস নিচ্ছেন শ্রেণিকক্ষে।

এসময় তাকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। প্রধান শিক্ষক আমাকে পড়াতে বলেছেন। এজন্য দেড় হাজার টাকা বেতন পায়। এখানে বর্তমানে একজন প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক আছেন। তবে তারা মাঝেমধ্যে আসেন। সব ক্লাস আমি একাই চালিয়ে যাচ্ছি।

এসময় একটি শ্রেণিকক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে কেউ জানায় ক্লাস ফাইভে, কেউ ক্লাস ফোর এবং কেউ বলল থ্রিতে পড়ে। অর্থাৎ একটি কক্ষে একসঙ্গে চলছে তিন শ্রেণির পাঠদান!

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিজা আক্তার ও রুনা আক্তারের কাছে ইংরেজিতে ফাইভ বানান জানতে চাইলে  দুজনের একজনও উত্তর দিতে পারেনি। চতুর্থ শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর অবস্থাও ছিল অভিন্ন।

এরপর দেখা হয় স্কুলের দপ্তরি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি কোনো বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মো. ইসমাইল জানান, দীর্ঘদিন ধরে জোড়াতালি দিয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। কিন্তু দেখার কেউ নেই। পড়ালেখা একেবারে হচ্ছে না বললেই চলে।

আরও পড়ুন: রক্তাক্ত টেক্সাস—স্কুলে ঢুকে তরুণের এলোপাতাড়ি গুলি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নিহত ২১

যোগাযোগ করা হলে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, করোনা মহামারীর পর থেকে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে স্কুলের পাঠদান। শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না। এসব নিয়ে কিছু বলতে গেলে উল্টো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। তাই ভয়ে সবাই মুখ বন্ধ রাখি। স্কুলে পড়ালেখা ঠিকমত না হওয়ার অনেক অভিভাবক সন্তানদের বেসরকারি বিভিন্ন স্কুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

এসব বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক গুলজার বেগমের মুঠোফোনে  যোগাযোগ করা হলে তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি অসুস্থ, তাই স্কুলে যেতে পারিনি। তবে সহকারী শিক্ষক কেন যাননি এই বিষয়ে আমি জানি না।

যোগাযোগ করা হলে সহকারী শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা বলেন, আমি জেলা পরিষদ সদস্যের শ্যালকের বউ এবং আমার বাবা বান্দরবান ডিসি কোর্টের একজন পিটিশন রাইটার। আমাকে শিক্ষা অফিস থেকে শোকজ করা হয়েছে। আমি জবাব দিব। তার আগে আপনি কীভাবে নিউজ করেন?

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!