শোডাউনে সেরা যারা—চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে

চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে নিজ নিজ জনসমর্থন নিয়ে শোডাউন করেছেন বিভিন্ন পদ প্রত্যাশীরা। শোডাউনের বহরে ছিল তাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অর্জিত সম্মান ও সমর্থন।

সরেজমিন দেখা যায়, গত সোমবার (৩০ মে) নগরের দি কিং অব চিটাগংয়ের সম্মেলনস্থলকে ঘিরে যুবলীগে পদ প্রত্যাশীদের শোডাউন হয়। এসব শোডাউনই জানিয়েছে, তাদের জনসমর্থনের মূল্যমান। এতে নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও ওমর গণি এমইএস কলেজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরশেদুল আলম চৌধুরী বাচ্চুর শোডাউন ছিল সব থেকে বড়। তিনি ১৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন করেন।

বাচ্চুর মিছিল নগরের জিইসি মোড় থেকে শুরু করে ওয়াসা মোড় থেকে সার্সন রোড় ঘুরে চকবাজার হয়ে প্রবর্তক মোড় গিয়ে অবস্থান নেয়। তাঁর শোডাউনের এই বিশাল বহর গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগসাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির অনুমোদন দেন। এতে বাচ্চুকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাছাড়া দলের দুঃসময়ে পাশে থাকা, জামায়াত-শিবিরবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সময়ের কর্মকাণ্ডে তিনি ছিলেন অন্যতম।

মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা উল্লেখ করে আরশেদুল আলম বাচ্চু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষে শান্তির বার্তা বয়ে আনতে এত বড় মিছিল হয়েছে। আমরা যে সুশৃঙ্খল সেটাও দেখানোর চেষ্টা করেছি, আশাবাদ আছে। যোগ্য নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন সিনিয়ররা। যখন পদ ছিল না তখনও জনগণের পাশে ছিলাম, না পেলেও জনগণের জন্য কাজ করে যাব।’

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের নেতৃত্বে কারা আসবে, উপহার নাছির—নওফেলের হাতে!

অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি মুরাদপুর থেকে পাঁচলাইশ মোড় পর্যন্ত শোডাউন নিয়ে অবস্থান করেন। এতে তাঁর সমর্থিত প্রায় ৬ হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেন। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আলোচিত এই সাবেক ছাত্রনেতার নেতৃত্বে নগরের বড় একটি অংশ ছাত্ররাজনীতি করছে। তারা পাঁচলাইশ মোড়ে অবস্থান নিয়ে স্লোগানে মুখোরিত রাখে পুরো এলাকা। রনি চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী।

প্রায় ৩৫ বছর ধরে ছাত্রশিবিরের দখলে থাকা চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ২০১৫ সালের বিজয় দিবসে দখলমুক্ত করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন নূরুল আজিম রনি। আশির দশকে ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেন ও ছাত্রইউনিয়ন নেতা শাহাদাতকে হত্যার মধ্যদিয়ে সেই সময় কলেজ দুটি দখলে নিয়েছিল শিবির। প্রায় তিন দশক পর রনি কলেজ দুটির নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

তাছাড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য হাফ পাস বাস ভাড়া করার দাবিতে আন্দোলন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজে সরকারি নীতিমালার বাইরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধিক ফি আদায়ে তা মওকুফের আন্দোলন ও বাড়তি টাকা ছাত্রছাত্রীদের ফেরত দেওয়া, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার নগরের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি নতুন বাস চালু, মাঠ রক্ষার আন্দোলন, করোনা আইসোলেশন সেন্টারে রোগীদের সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে সেবা দেওয়া, স্বাধীন বাংলা নামে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু, সিআরবিতে হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনসহ নানা কর্মকাণ্ডে সরব ছিলেন নূরুল আজিম রনি।

আরও পড়ুন: উত্তর—দক্ষিণের পথেই হাঁটল নগর যুবলীগ, কেন্দ্রে ৯২ প্রত্যাশীর ভাগ্য

যুবলীগের প্রত্যাশিত পদ নিয়ে আশাবাদী বলে জানান নূরুল আজিম রনি। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘নগরের বেকার যুবসমাজকে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিসহ তাদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। বেকারত্ব নিরসনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। সাধারণ মানুষের পাশে আগেও ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’

এদিকে দেবাশীষ পাল দেবু সিআরবি এলাকা থেকে শুরু করে পাঁচলাইশ সম্মেলনস্থল পর্যন্ত শোডাউন দেন। এতে তাঁর সমর্থনে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী যোগ দেন। পরে তারা সিআরবি এলাকায় অবস্থান নেন। যুবলীগের পদ প্রত্যাশী এই নেতা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘যারা দলের দুর্দিনে কাজ করেছে, করোনাকালীন সময়ে মানুষের পাশে ছিল তাদের যেন কমিটিতে আনা হয়। যারা দলের যেকোনো কাজে সবসময় সম্পৃক্ত ছিল তাদের যেন কমিটিতে আনা হয়। সাধারণ মানুষ ভয় পায় এমন নেতৃত্ব যদি আসে তবে তা দলের জন্য হানিকারক হবে বলে আমার মনে হয়।’

নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দলীয় আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করি। যদি আমাকে দল মনোনীত করে, তবে মানবিক যে প্রজেক্টগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি তা আরো গতি পাবে। আশ্রয়ণ প্রকল্প যেটি আছে তা থেকে দুই ওয়ার্ডে দুটি পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছা আছে প্রকল্পটি আরো বৃদ্ধি করার। চাল, ওষুধ বিতরণ কর্মসূচি আরো গতিশীল করার ইচ্ছা আছে। এসব প্রকল্প চলমান আছে। পদে না আসলেও এসব কার্যক্রমে সবসময় সম্পৃক্ততা থাকবো।’

আরও পড়ুন: গ্রুপিং বন্ধ করে চট্টগ্রামে যুবলীগের নতুন অধ্যায় শুরুর কথা বললেন পরশ

এদিকে বায়েজিদ এলাকা থেকে শোডাউন বের করেন ইঞ্জিনিয়ার আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। নগরের শেরশাহ এলাকা থেকে বিশাল জনসমর্থন নিয়ে তিনি এই শোডাউন বের করেন। শোডাউনটি নগরের দুই নম্বর গেট এলাকা প্রদক্ষিণ করে পাঁচলাইশ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতাকর্মী তাঁর পক্ষে মিছিলে যোগ দেন।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর ধরে যুবলীগ করে আসছি। পদবি ছাড়াই মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। দুঃসময়ে দলের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি। তবে সম্মেলনে যুবলীগ চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, যারা প্রকৃত ত্যাগী, যুবলীগকে সুসংগঠিত করতে পারবে তাদের পদে আনা হবে। তাদের এমন বক্তব্যে আমি আশাবাদী। দায়িত্ব পেলে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে যা করা দরকার তা করতে প্রস্তুত আছি।’

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!