রাত জেগে পাহারা, গ্রেপ্তার এড়াতে বাঁশখালীর ৪ রাস্তায় পিলার বসালেন সেই লিয়াকত

বাঁশখালী গণ্ডামারার আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও ২৯ মামলার পলাতক আসামি মো. লিয়াকত আলী গত ৬৯ দিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাস্তায় পাকা পিলার পুঁতে সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রেখেছেন। গ্রেপ্তার ঠেকাতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ির গতিরোধ করতে তিনি এটি করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। শুধু তাই নয়, নিজ বাড়ির উঠানে টাঙিয়েছেন বিশাল তাঁবু। চারপাশে লাগিয়েছেন বড় বড় ফ্লাশ লাইট। সেখানে বসে প্রতিদিন জনসমাগম ঘটিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত সভায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

এদিকে, র‌্যাব-পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে বেশ কয়েকবার। এ নিয়ে চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে নিজের ফেসবুকে আইডিতে একাধিক পোস্টও করেছেন। এ নিয়ে বাঁশখালীজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

লিয়াকত আলীর ফেসবুক আইডি’র পোস্টে দেখা গেছে, গত ৬৯ দিনের প্রতিরাতেই বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ নিয়ে রাতভর সরকার ও আইনশৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভিডিওর মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ওখানে প্রথম রজনী থেকে ৬৯ রজনী পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে গত ২৯ নভেম্বর রাতে র‌্যাব-পুলিশ যৌথ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর লিয়াকত আলী এদিন রাত ২টা ৮ মিনিটে স্ট্যাটাস দেন ‘যতই ভয় দেখান গণ্ডামারা থেকে বের হবো না-আমার জানাজার মানুষগুলোর সামনেই আমাকে মারতে হবে।’

আরও পড়ুন : বাঁশখালীতে বিএনপির মিছিল থেকে এলোপাতাড়ি গাড়ি ভাঙচুর, চেয়ারম্যান লিয়াকতের দেহরক্ষী ধরা

এ ঘটনার পাশাপাশি শিষ্য আবু আহমদ গুরু লিয়াকতের সঙ্গে ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে দুজনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছে। তারা দুজনই প্রতিরাতে নারী-পুরুষ জড়ো করে এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন। তবে আবু আহমেদ আড়ালে থাকলেও লিয়াকত প্রকাশ্যভাবেই করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক, নাশকতার ঘটনা, চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৯ মামলার পলাতক আসামি লিয়াকত আলী। তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর শিষ্য আবু আহমদ উপজেলা ছাত্রদল নেতা। দুজনই গণ্ডামারার ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আলোচনায় ছিলেন।

এছাড়া গুরু লিয়াকত ও শিষ্য আবু আহমদের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে ও ১৯৯৯ সালে দুজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন, ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ৬ জনকে গুলি করে খুন, ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি একজনকে গুলি করে খুন, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ৭ জন শ্রমিককে গুলি করে খুন ও শতাধিক শ্রমিককে আহত করা, ২০২৩ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার, ২০১৪ সালে অস্ত্র আইন ও ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলা রয়েছে।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি সন্ত্রাসী নই। আমাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপরও ফ্যাসিবাদী সরকার আমাকে হত্যার চক্রান্ত করছে। আমার বিরুদ্ধে করা প্রতিটি মামলা মিথ্যা। আমাকে গ্রামবাসী ভালোবাসে। তাই গ্রামবাসী আমাকে বাঁচানোর জন্য প্রতিরাতে ঘিরে রাখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে গ্রেপ্তার করতে চাই। আমার বিরুদ্ধে বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানায় আরও দুটি নাশকতার মিথ্যা মামলা করা হয়েছে ।

পরে লিয়াকতের শিষ্য আবু আহমদের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জানা যায়, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রসহ লিয়াকত আলীকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও গত ১৩ জুন তিনি জামিনে আসেন। এরপর পুরাতন খুনের মামলাগুলোর ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় এবং নতুন করে হাটহাজারী ও বাঁশখালী থানায় দুটি মামলা হয়। এরই মধ্যে তাকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আরও পড়ুন : বহিষ্কারের খড়গ কাঁধে উঠল বাঁশখালীর সেই লিয়াকত চেয়ারম্যানের

গত মে মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এতকিছুর পরও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং ফেসবুকে পোস্ট করছেন। তবে গ্রামবাসী ও গণ্ডামারা এলাকায় নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারাও লিয়াকতের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ওসমান গণি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, র‌্যাব-পুলিশ বেশ কয়েকবার লিয়াকতকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য ৪ জায়গার রাস্তার মাঝখানে পাকা পিলার পুঁতে দিয়েছেন লিয়াকত। এছাড়া প্রতিরাতে জনসমাগম ঘটিয়ে উল্লাস ও সরকারবিরোধী অপপ্রচার ছড়াচ্ছে ফেসবুকে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করেছি।

যোগাযোগ করা হলে বাঁশখালীর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমেদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। গণ্ডামারার বিষয়টি নজরে আছে। সন্ত্রাসী যেই হোক তাকে কোনোপ্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করা হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!