যৌতুকের মামলা করল মা, পাষণ্ড বাবা মেরে পা ভাঙল মেয়ের—মামলা নিচ্ছে না পুলিশ

চন্দনাইশে যৌতুকলোভী এক পরিবারের কারণে সন্তানসহ ঘরছাড়া এক গৃহবধূ।

যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় পাষণ্ড স্বামী লাঠি দিয়ে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে আপন মেয়ের! মেয়ের চিৎকার শুনে বাঁচাতে এলে মারধরে প্রচণ্ড জখম করা হয় মাকেও। অথচ অমানবিক এ নির্যাতনের ঘটনায়ও মামলা নিচ্ছে না চন্দনাইশ থানা পুলিশ!

জানা যায়, যৌতুকের কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রায়সময় সুমিকে নির্যাতন করতো। এ অবস্থায় আইনের আশ্রয় নেন অসহায় গৃহবধূ সুমি আক্তার। মামলা করেন চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে।

মামলায় অভিযুক্ত করা হয় স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), ননদ পারভিন আক্তার ওরফে পাখি আক্তার (৪০), নাছির উদ্দিন (৪৮) ও মো. জামালকে (৪৫)।

আরও পড়ুন: নৃশংস ভিডিও—সাহিনুদ্দীনকে ‘যতন সাহা’ বানানো যুবক আটক

এদিকে মামলা করার পর আরও ক্ষেপে যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ অবস্থায় বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রাও।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূ সুমি আক্তারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী জাহাঙ্গীর আলম। টাকা এনে দিতে না পারায় গত ২০ অক্টোবর সকালে লাঠি দিয়ে মেয়ে হেনা আক্তারকে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে মেয়ের চিৎকার শুনে মা দৌড়ে এলে তাকেও মেরে মারাত্মক যখম করা হয়। এ সময় চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে চন্দনাইশ হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর তাদের পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন।

সুমির ভাই শামীম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ১৮ বছর আগে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বোনের বিয়ে হয়। আমার বোনের এক মেয়ে এবং এক ছেলে। কিছুদিন ধরে তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ৫০ হাজার টাকা এনে দিতে বারবার বোনকে চাপ দেয়। কিন্তু আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সে টাকা দিতে পারবে না বলে জানায়। এরপর থেকে আমার বোন, ভাগ্নি এবং ভাগিনার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। দিন দিন নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে।

গত ২০ অক্টোবর সকালে আমার বোন পুকুরে গেলে ওই সময় হঠাৎ তার স্বামী, ননদ, ননদের স্বামী ও ভাসুর মিলে লাঠি এবং তক্তা দিয়ে ভাগ্নি হেনা আক্তারকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। ভাগ্নির চিৎকার শুনে তার মা ঘটনাস্থলে এসে দেখে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এ সময় আমার বোনকেও বেধড়ক পেটানো হয়। নির্মম নির্যাতনে আমার ভাগ্নি হেনার ডান হাত ও ডান পা ভেঙে গেছে।

আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং—চাঁদা নিতে গিয়ে ধরা খেল ৫ কিশোর

এদিকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত দেওয়া হচ্ছে হুমকি। নিরাপত্তাহীনতায় দুই সন্তানকে নিয়ে এখন ঘরছাড়া গৃহবধূ সুমি।

যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন সরকার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, যৌতুক দাবির অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ স্বামীসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মারধরের ঘটনায় কেন মামলা নেওয়া হচ্ছে না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি।

এএইচ/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!