ভারী বৃষ্টিতে খাল—রাস্তা একাকার, ছোট্ট ভুলে বড় বিপদ

খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি খাল। যে খালটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিভিন্ন জনবসতি এলাকা। খালে ময়লার স্তূপ এমনভাবে জমেছে, পানি প্রবাহ দূরে থাকুক পানির সন্ধান পাওয়াই কঠিন!

খালের ওপর জন্মেছে বড় বড় ঘাস আর আগাছা। ছোট ছেলেরা সেখানে অনায়াসেই হাঁটছে। আবার কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে নেমেছে জীবিকার প্রয়োজনে।

এ দৃশ্য নগরের পশ্চিম বাকলিয়া কে বি আমান আলী রোড সংলগ্ন চাক্তাই ডারভারশন খালের।

আরও পড়ুন: পেশায় ফিরছে কারিগররা, মুষলধারে বৃষ্টির ঢল নেমেছে ছাতার দোকানে

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বেলা ১২টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। তবে ভিন্ন চিত্রও আছে। রাস্তার বাম পাশের খাল অপরিষ্কার হলেও ডান পাশের খাল বেশ পরিষ্কার।

জানা গেছে, চাক্তাই ডারভারশন খালটি চকবাজার, বাকলিয়া, ফুলতলা, ঘাসিয়াপাড়া, রসুলবাগ, সবুজবাগ, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, বারইপাড়া, কাতালগঞ্জসহ হিজরা খালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তবে খালে ময়লা-আবর্জনার কারণে একেবারেই বন্ধ রয়েছে পানিপ্রবাহ। ফলে অল্পবৃষ্টিতে ঢুবে যায় এসব এলাকার রাস্তা ও অলিগলি। পানি ঢুকে পড়ে নিচতলার দোকান, মার্কেট ও বাসাবাড়িতে। আবর্জনার কারণে এলাকার বিভিন্ন ড্রেনের পানি খালে প্রবেশ করতে পারে না।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষার আগে দুবার পরিষ্কার করা হয়েছিল খালের ময়লা-আবর্জনা। তবে মাটি তোলা হয়নি। সপ্তাহ না যেতেই আবারও পুরনো চেহারা ফিরে আসে। পরিষ্কার হলেও মিলছে না সুফল।

খালের আবর্জনার উপর দাঁড়িয়ে আছে এক কিশোর-আলোকিত চট্টগ্রাম

সরেজমিন দেখা গেছে, ময়লা-আবর্জনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলিথিন আর ককশিট। ময়লা-আবর্জনা জমতে জমতে শক্ত আবরণ হয়েছে খালের ওপর। একেবারেই বন্ধ পানি চলাচল। খালের ওপর রয়েছে ২-৩টি লোহার ব্রিজ। এসব ব্রিজ দিয়ে খালপাড়ের বাসিন্দারা আসা-যাওয়া করছেন। এছাড়া খালের সঙ্গে লাগোয়া ফুটপাত রয়েছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে। এছাড়া ব্রিজ ও গ্যাস লাইনের কারণেও পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাইপে আটকে আছে আবর্জনা।

আরও পড়ুন: একটু বৃষ্টিতেই জলে ভাসে বাকলিয়া, জনদুর্ভোগের সুযোগে ভাড়া হয় দ্বিগুণ

এসময় আলী শাহ মাজার গেইটের সামনে এক কিশোরকে একটি ককশিটে দাঁড়িয়ে কী যেন খুঁজতে দেখা গেল। জানতে চাইলে সে বলে, প্লাস্টিক খুঁজছে। তার চোখেমুখে কোনো ভয় নেই। অথচ সামান্য অসর্তকায় ঘটতে পারে বড় বিপদ।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় প্রতিদিন খালে নামে বিভিন্ন বয়সের পথশিশু। মানা করলেও তারা শোনে না। এ কারণে যেকোনো সময় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

অভিযোগ আছে, খালপাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে রাত হলে খালে ফেলে দেয়। খালপাড়ে বসা বিভিন্ন দোকান এবং সবজি বিক্রেতারাও আবর্জনা ফেলে খালে। এছাড়া বহদ্দারহাট বাজারের মাছের বক্সের ককশিটগুলো ফেলা হয় এখানে।

২৫ বছর ধরে ঘাসিয়াপাড়া এলাকায় বসবাস করা লিটন দাশ বলেন, এবারের মতো পানি আর দেখিনি। নিচতলার ঘরে কোমর থেকে বেশি পানি উঠেছে। তিনদিন ধরে মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। বৃষ্টি ও জোয়ারের সময় ফুলে-ফেঁপে উঠে খালের আবর্জনা। পানি বেশি হলে রাস্তা ও খাল মিশে এককার হয়ে যায়। তখন দেখে বোঝার উপায় থাকে না, কোনটি খাল, কোনটি রাস্তা। তাই তখন নতুন কেউ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।

কে বি আমান আলী রোডের দোকানদার মো. জাহেদ বলেন, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় প্রতিবছর। কিন্তু সুফল পাওয়া যায় না। এখানে অল্প বৃষ্টিতে পানি উঠে যায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি উঠেছে। গভীর রাতেও পানি নামতে পারেনি। কারণ খাল ময়লা-আবর্জনায় একেবারে ঠাসা, বন্ধ পানি চলাচল।

তবে এলাকাবাসী বলছেন, শুধু ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার নয়, সঙ্গে খালির মাটিও অপসারণ করতে হবে। খালের গভীরতা বাড়লে এবং পানি চলাচল স্বাভাবিক থাকলে দুর্ভোগ থেকে অনেকাংশে মুক্তি মিলবে।

আরও পড়ুন: খাল যেন খোলা মাঠ, বৃষ্টি হলেই জলজট

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সির মো. শহিদুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চাক্তাই ডারভারশন এই খালটির অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষার আগেই দুবার পরিষ্কার করা হয়েছে। একবার সিডিএ এবং একবার সিটি করপোরেশনের করেছে। তবে দ্বিতীয়বার পরিষ্কারের সময় কাজ পুরোপুরি করা যায়নি স্কেভেটর সংকটের কারণে। বৃহস্পতিবার চসিকের সভায় মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি এই বিষয়ে অবগত আছেন। এছাড়া গঠিত কমিটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আশাকরি শিগগির কাজ শুরু হবে।

খালপাড় সংলগ্ন ফুটপাত অবৈধ দখলে-আলোকিত চট্টগ্রাম

খালের মাটি তোলার বিষয়ে এলাকাবাসীর কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে কাউন্সিলর বলেন, খাল শুধু পরিষ্কার করলেই হবে না, সঙ্গে মাটিও তুলতে হবে। না হয় যতই পরিষ্কার করা হোক না কেন কোনো সুফল আসবে না। এছাড়া পলিথিনের ব্যবহার কমাতে হবে। খালের ময়লার মধ্যে বেশিরভাগ পলিথিন। এ নিয়ে এলাকাবাসীরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!