বিদ্যুৎ বাঁচাতে গিয়ে চট্টগ্রামে ‘দ্বিগুণ’ ব্যবহার বেড়েছে ডিজেলের

আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকেই জ্বালানি তেল নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। এরমধ্যে ডিজেলের ব্যবহার কমানো ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য শিডিউল করে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু এতে ডিজেলের ব্যবহারতো কমেনি বরং লোডশেডিংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে ডিজেলের ব্যবহার বেড়েছে দ্বিগুণ!

দেশজুড়ে চলমান লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামেও। ফলে লোডশেডিংয়ের সময়ও উৎপাদন চলমান রাখতে নগরের বিভিন্ন শিল্প কারখানাগুলোতে জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নগরজুড়ে দৈনিক ২ থেকে ৩ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে এসব শিল্পকারখানাগুলো জেনারেটর চালিয়ে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ ডিজেল ব্যবহার করছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত পরিমাণ ডিজেল খরচের কারণে নগড়জুড়ে ডিজেলের চাহিদা ও বিক্রি গতবছরের তুলনায় দুই গুণ বাড়লেও পেট্রোল পাম্পগুলোতে ডিজেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া লোডশেডিংয়ের সময় বিভিন্ন শপিং মল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ বাসা-বাড়িতেও জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। এসব জেনারেটরের জ্বালানি হিসেবে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ ডিজেল ব্যবহার করা হচ্ছে।

নগরের পেট্রোল পাম্পগুলোর ডিজেল বিক্রির পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে চট্টগ্রামের পেট্রোল পাম্পগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ৫-৬ হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হতো। এ বছর লোডশেডিং বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ডিজেলের ব্যবহারও। বর্তমানে নগরের পেট্রোল পাম্পগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। তবে নগরে ডিজেলের চাহিদা ও বিক্রি প্রায় দুই গুণ বেড়ে গেলেও সে তুলনায় পাম্পগুলোতে ডিজেলের সরবরাহ কিছুটা কমেছে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগের পাহাড়

এ বিষয়ে মেসার্স এসএইচ খাঁন অ্যান্ড সন্স ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্তমানে ডিজেলের বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। গত বছরও আমাদের পাম্পে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হতো। কিন্তু লোডশেডিং শুরুর পর থেকে হঠাৎ ডিজেলের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে আমাদের পাম্পে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। এসএমসি বা বেক্সিমকোর মতো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আমাদের থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত জেনারেটরের জন্য নিয়মিত প্রচুর পরিমা ডিজেল নিয়ে যায়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ মার্কেট বা বাসাবাড়ির জেনারেটরের জন্যও প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ডিজেল কিনছে মানুষজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে ডিজেল বিক্রির হার বাড়লেও আমাদের চাহিদামতো ডিজেল দিচ্ছে না তেল কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলো আগের তুলনায় পাম্পগুলোতে যে পরিমাণ তেল সরবরাহ বাড়িয়েছে তার চেয়ে বেশি সরবরাহের চাহিদা বেড়েছে আমাদের। বর্তমানে তেল কোম্পানির গাড়ি এসে প্রতিদিন আমাদেরকে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার লিটার ডিজেল দেয়। এরমধ্যে একদিন গাড়ি না আসলে ডিজেল নিয়ে ক্রেতাদের কাছে বেকায়দায় পড়তে হয়। কারণ প্রতিদিনের সরবরাহকৃত সাড়ে ১৩ হাজার লিটারের মধ্যে একটা বড় অংশ নিয়ে যায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো।’

কিউসি পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার মীর খাঁন চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চট্টগ্রামে ডিজেলের বিক্রি বেড়েছে। অন্যান্য পেট্রোল পাম্পের তুলনায় আমরা ডিজেলের সরবরাহ অকটেনের চেয়ে কম রাখলেও আমাদের পাম্পে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। আমাদের পাম্পে ডিজেল বিক্রির হারে এটা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। লোডশেডিংয়ের প্রভাবে জেনারেটরের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ডিজেল বিক্রির হারও বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন্স) মুস্তফা কুদরুত-ই-ইলাহী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সবখানেই জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে ডিজেলের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে ৪ লাখ ৫ হাজার টন ডিজেল মজুদ রয়েছে। এ সরবরাহে প্রায় ৩০ থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত নতুনভাবে আমদানি না হলেও দেশে ডিজেলের চাহিদা মিটবে।’

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!