চট্টগ্রামে দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগের পাহাড়

২২ সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে ৪৭ অভিযোগ

পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ভবন নির্মাণ কাজ এবং আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সল্টগোলা থেকে কাস্টমসসহ কয়েকটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকার বকেয়া বিল আদায় করতে পারেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন মোহাম্মদ শাহ আলম।

অন্যদিকে রেলওয়ের ভুয়া লিজের কাগজ দিয়ে মো. ফয়েজ আহম্মদ মিয়া থেকে ৭৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। তাদের মত এমন আরো ভুক্তভোগীরা ২২টি সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে সরকারি অফিসের দুর্নীতি—হয়রানি নিয়ে গণশুনানি করবে দুদক

বুধবার (৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাহ আলম বীর উত্তম অডিটরিয়ামে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২২ সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে ৪৭ অভিযোগ। এরমধ্যে সব অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. মোজাম্মেল হক খান।

গণশুনানিতে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। এতে ঠিকাদারের বকেয়া বিল পরিশোধ না করা, ১৭ বছরেও লেকসিটি আবাসিক প্রকল্পে ৯৮ জনকে প্লট বুঝিয়ে না দেওয়া, ঘুষ বাণিজ্য, উচ্ছেদ অভিযানের আদেশ থাকার পরও উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা না করা, পৌর কর কমিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগসহ সাতটি অভিযোগ পাওয়া গেছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওষুধ চোর চক্র, চাঁদাবাজি, চিকিৎসা সেবায় অবহেলা, সরকারি পরিক্ষাগারে টেস্ট না করে প্রাইভেটে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, যন্ত্রাংশ মেরামত না করা, মেশিন বাবদ টাকা আত্মসাতসহ ৫টি অভিযোগ তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগীরা।

পাসপোর্ট অফিসে অতিরিক্ত ফি প্রদান, সংশোধনী বিড়ম্বনা, দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফাইল জমা নেওয়াসহ চারটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবৈধ ভবন না ভাঙ্গা, খাস জমির পুকুর ভরাটের অভিযোগে ব্যবস্থা না নেওয়া, ঘুষ ছাড়া উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করা, অবৈধ ভবন নির্মাণ প্ল্যান পাসসহ চার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভূমি অফিসে দলিল জালিয়াতি, ঘুষ বাণিজ্যসহ তিন অভিযোগ। জেলা প্রশাসকের এলএ শাখার বিরুদ্ধে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাতসহ তিন অভিযোগ।

রেলওয়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি ও ভুয়া লিজের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাসহ দুই অভিযোগ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণের টাকা না দেওয়া ও পণ্য ছাড় করতে হয়রানিসহ দুই অভিযোগ।

বিআরটিএ’র বিরুদ্ধে লাইসেন্স পেতে দুর্ভোগসহ দুটি অভিযোগ।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে ঘুষের বিনিময়ে প্রিপেইড মিটার প্রদান, অবৈধ সংযোগসহ দুটি অভিযোগ।

চট্টগ্রাম ওয়াসার বিরুদ্ধে সংযোগ না দিয়ে বিল আদায়ের অভিযোগসহ দুটি অভিযোগ সংস্থাটির নামে।

বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রণে পেনশন ও ঈদুল আজহা উৎসব ভাতা না পাওয়াসহ দুটি অভিযোগ।

চট্টগ্রাম কাস্টমে ঘুষ বাণিজ্য ভোক্তার উপর প্রভাব ফেলার অভিযোগ।

কেজিডিসিএল-এ নাম পরিবর্তনে হয়রানির অভিযোগ।

খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরে অবৈধভাবে ঠিকাদার নিবন্ধনের অভিযোগ।

পানি উন্নয়নে দরপত্র সিডিউল ক্রয়ে বাঁধার অভিযোগ।

বিআরটিসি-এ অযৌক্তিক ভ্যাট কর্তনের অভিযোগ।

বিটিসিএল-এ ভিআইপি ব্যবসা ও অবৈধভাবে মালামাল বিক্রির অভিযোগ।

যমুনা অয়েল কোম্পানিতে সিবিএ নেতার চাঁদাবাজি, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ভূমি অধিগ্রহণ না করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় রাস্তা নির্মানের অভিযোগ।

জাতীয় গৃহায়ণ অধিদপ্তরে বরাদ্দকৃত প্লট না দিয়ে হয়রানির অভিযোগ ও জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদনের পরেও সমাধান না পাওয়ার অভিযোগ।

দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) একেএম সোহেলের পরিচালনায় শুনানিতে অভিযোগকারীদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান।

মোজাম্মেল হক খান বলেন, সরকারি সব সংস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো সহজ কাজকে দীর্ঘসূত্রিতার অজুহাতে আটকে রাখার সুযোগ নেই। আজ (বুধবার) যেসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে তার সঠিক প্রতিফলন যাতে হয় সেদিকে নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

আরএস/এসআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!