প্রধানমন্ত্রী আসছেন, জনসভা ঘিরে ‘ব্যানার-পোস্টারে’ ঢেকে গেছে চট্টগ্রাম

দীর্ঘদিন পর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভা। সেই জনসভায় আসবেন দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার আগমন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। উৎসাহ-উদ্দীপনায় চলছে প্রধানমন্ত্রীকে বরণের প্রস্তুতি।

সমাবেশস্থলের আশপাশ থেকে শুরু করে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এখন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের ব্যানার-পোস্টার ও ফেস্টুনে সয়লাব। বড় বড় ব্যানারে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন নেতারা। কে কার থেকে বড় ব্যানার টাঙাবেন, এমন প্রতিযোগিতাই চলছে এখন নগরে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তৈরি করা হয়েছে তোরণ।

নগরের জামালখান থেকে শুরু করে কাজির দেউড়ি হয়ে যেদিকেই দুচোখ যাবে শুধু ব্যানার আর পোস্টারের ছড়াছড়ি। সবচেয়ে বেশি ব্যানার-পোস্টার যুবলীগের পদপ্রত্যাশীদের।

গত ৩০ মে নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নগর ইউনিট যুবলীগের কাউন্সিল হয়। সম্মেলনের ৫ মাস পেরিয়ে গেলে হলে এখনও গঠন হয়নি কমিটি। তাই যুবলীগের পদপ্রত্যাশীদের অনেকেই এবার ব্যানার-পোস্টারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মরিয়া। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামে আসা-যাওয়ার পথকেই বেছে নিয়েছেন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরের আন্দরকিল্লা, জামালখান, নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, পলোগ্রাউন্ড মাঠের আশপাশ, সিআরবি, লালখানবাজার, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, টাইগার পাস, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং ছেয়ে গেছে নেতাদের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে।

আরও পড়ুন : প্রধানমন্ত্রীর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত করার আহ্বান এমএ সালামের

পোস্টার-ব্যানারে কেউ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা এবং কেউ কেউ সমাবেশে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। আবার অনেকেই ভালো জায়গা দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আগে থেকেই ব্যানার ও তোরণ লাগানোর জন্য গাছ-বাঁশের কাঠামো তৈরি করে রেখেছেন বিভিন্ন স্থানে।

বিশেষ করে পলোগ্রাউন্ড মাঠে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে বাঁশ ও কাঠের তৈরি অসংখ্য কাঠামো। তবে টাইগারপাস মোড়ে বাঘের ভাস্কর্যের গা ঘেঁষে ব্যানার টাঙানোর জন্য বিশালভাবে তৈরি করা বাঁশের কাঠামোর কারণে বাঘগুলো ঢাকা পড়ে। অবশ্য সমালোচনার মুখে সেসব ব্যানার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া কাজির দেউড়ি থেকে লালখানবাজারের আইল্যান্ডের সৌন্দর্যও আড়াল হয়ে পড়েছে ফেস্টুনে। গুরুত্বপূর্ণ গোলচত্বরগুলো দখল হয়ে গেছে বড় বড় ব্যানারে।

লালখানবাজার মোড়ে উত্তর জেলা কৃষক লীগের নামে রাস্তার দুপাশে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। এছাড়া টাইগারপাস মোড়ে হাসিনা মহিউদ্দিনের নামেরও একটি তোরণ দেখা গেছে।

এছাড়া কাজির দেউড়ি থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রিয়াজুল করিম বিলাস, খলিলুর রহমান নাহিদ, মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আলমগীর কবির, মো. ওসমান, মশিউর রহমান চৌধুরী, মামুন চৌধুরী, আজিজুর রহমান আজিজের ব্যানার-পোস্টার ছিল চোখে পড়ার মতো।

সচেতন মহল বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই নেতারা বড় বড় ব্যানার-পোস্টার তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেসব সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়া করবেন মূলত সেসব সড়কেই ব্যানার-পোস্টারের ছড়াছড়ি। কে কার থেকে বড় ব্যানার তুলবে, সেই প্রতিযোগিতা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর পর আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টাইগারপাস মোড় হয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভায় যাবেন তিনি। এদিন পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন তিনি।

দলীয় সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের জনসভা ও প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মীরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার অপেক্ষায়। কারণ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আসতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাও। এছাড়া জনসভাকে সফল করতে নগরের বিভিন্ন স্থানে প্রচার-প্রচারণা ও পথসভা করা হচ্ছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন ভাঙা সড়কগুলো সংস্কারের পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নতুন করে সাজছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। ভাঙাচোরা সড়ক মেরামত ও বিভিন্ন সড়কের আইল্যান্ড থেকে শুরু করে ফুটপাত রঙিন করে তোলা হচ্ছে।

এছাড়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভার, এমএ মান্নান ফ্লাইওভারের মাঝখানের অংশটির ল্যাম্পপোস্টে নৌকার আকৃতিতে এলইডি বাতি লাগিয়ে আলো ঝলমলে করা হয়েছে। টাইগারবাসের শ্রীহীন হয়ে পড়া বাঘগুলোও রঙ-তুলির আঁচড়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রামের জনসভায় ভাষণ দে‌বেন জা‌তির জন‌কের কন‌্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা। এ নিয়ে চট্টগ্রামের মানু‌ষসহ দলীয় নেতার্মীদের মনে ব‌্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। নেতাকর্মী‌রা আনন্দে উচ্ছ্বসিত।

মেয়র আরও বলেন, নগরকে রঙিনভাবে সাজাতে কাজ করছে সি‌টি ক‌রপোরেশন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন‌ ঘি‌রে ভাস্কর্যগুলোকে নতুন রূপ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও মহান বিজয় দিবস‌ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও স্থাপত‌্যশৈলীগু‌লো‌ ডি‌সেম্বর মাস আসার আগেই ঝকঝ‌কে-তকত‌কে করে তোলা হবে। জনসভা ঘিরে বিভিন্ন স্থানে লাগানো ব্যানার-পোস্টারগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!