প্যারাবন ধ্বংস—কার ইশারায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় নেই ‘প্রভাবশালীরা’

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর প্যারাবন ধ্বংসের ঘটনায় ‘প্রভাবশালীদের’ নাম বাদ দিয়ে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম।

মামলার আসামিরা হলেন- মহেশখালীর রুকন উদ্দিন (৪০), কক্সবাজার সদর ঝিলংজা হাজী পাড়া আমীর আলী (৪৫),বদরমোকাম কস্তুরাঘাট এলাকার মো. কামাল ওরফে কামাল মাঝি (৪৮), দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার এবিসি ঘোনা এলাকার মো. ইসলাম ওরফে খোল বাহাদুর (৫২), আলিরজাহান সাহিত্যিকা পল্লী এলাকার আব্দুল মালেক ইমন (৪৩), মহেশখালী চরপাড়া এলাকার মো. ইফসুফ (৪২) ও কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম এলাকার মো. ইব্রাহীমসহ (৩০) অজ্ঞাত ৮-১০ জন।

আরও পড়ুন: পাহাড় কাটা : ১৩ ব্যক্তিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানা

অভিযোগ উঠেছে ‘প্রভাবশালীরা’ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করায় তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

পরিবেশকর্মীদের তথ্যমতে, গত এক মাস ধরে কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটের বাঁকখালী নদীর অন্তত ১৫ হাজার প্যারাবন গাছ নিধন করে রাতের আঁধারে ডাম্পট্রাক দিয়ে মাটি ফেলে নদী দখল করা হয়। এ দখলের নেতৃত্বে ছিল অন্তত ২০-২৫ জনের একটি ‘প্রভাবশালী’ সিন্ডিকেট। এ ঘটনায় শহরজুড়ে আন্দোলন শুরুর পর একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের টনক নড়ে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু মামলায় দেখা যায় ‘প্রভাবশালী’ কারো নাম নেই।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, প্যারাবন কেটে নদী দখলে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার ‘দালাল’ নেত্রকোনা জেলার ওমর ফারুক। তাঁর নেতৃত্বে নদী দখলের মহোৎসব চলছে।

এই সিন্ডিকেটের বাকিরা হলেন- স্থানীয় কফিল উদ্দিন, মহেশখালীর শিবলু, জোয়ারিয়া নালার হেলালুর রশিদ, লিংক রোডের নুরুল আলম, বৈল্যাপাড়ার আমিন, ঝাউতলার মো. আলী, কামাল প্রকাশ ইট কামাল, রামুর মোস্তফা কামাল, মাহামুদুল করিম, খুরুশকুলের সোহেল ও বাবলু, লালদীঘিরপাড় এলাকার আশিক, গোলাম ফারুক, শরীফুল আলম, আবদুল্লাহ চৌধুরী, চট্টগ্রামের ইকবাল, শাহিনা আক্তার, হ্নীলার সেলিম, মোবাশ্বেরা, খুরুশকুলের এমদাদ উল্লাহ, নুরুল আবছার, কামাল উদ্দিন, কেফয়েত উল্লাহ ও নুনিয়ারছড়ার মো. হাসান।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরে মামলায় এদের কাউকেই আসামি করা হয়নি। এ নিয়ে পরিবেশকর্মী, সচেতনমহল ও নদী দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল’র প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনা না হলে বাঁকখালী নদী ও প্যারাবন রক্ষা করা যাবে না। টাকার বিনিময়ে যদি আসল অপরাধীদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয় তাহলে অপরাধ কখনো দমন করা যাবে না। সুতরাং পুনরায় তদন্ত করে আসল দখলবাজদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করা জরুরি।

আরও পড়ুন: ১০ তলা বিল্ডিং উঠল ছাড়পত্র ছাড়াই, হঠাৎ ঘুম ভাঙল পরিবেশের

জানতে চাইলে মামলার বাদী ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, নদী দখল ও প্যারাবন নিধনের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দখলের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে মামলা রেকর্ডের পর আরও কিছু দখলবাজদের নাম শোনা যাচ্ছে।

টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে প্রভাবশালীদের বাদ দেওয়ার কথা সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, নদী দখল ও প্যারাবন নিধনের সঙ্গে জড়িত কেউ বাদ পড়লে তদন্ত করে তাদেরও মামলায় আসামি করা হবে।

যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা আলোকিত চট্টগ্রাম বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সকল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি কাকে আসামি করলন, কাকে বাদ দিলেন সেটি তার ব্যাপার। তবে টাকার বিনিময়ে দখলবাজদের নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এদিকে অভিযোগ বিষয়ে জানতে ওমর ফারুকের সাথে একাধিবার যোগাযোগ চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বলরাম/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!