‘পরিবেশের কাণ্ড’—পাহাড়ে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে কপালে মামলা জুটল কাউন্সিলর জসিমের

উত্তর পাহাড়তলী লেকসিটি আবাসিক সংলগ্ন এলাকায় পাহাড় কাটার মিথ্যা অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও তাঁর স্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম মহানগর) বিরুদ্ধে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ আগস্ট নগরের আকবরশাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী লেকসিটি আবাসিক সংলগ্ন এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম। পরিদর্শনের সময় কর্মকর্তারা ৩ শতাংশ অংশের ছোট-বড় গাছ ও ঝোপঝাড় কেটে টিলা সমান করে গাছরোপণ ও টিনশেড সেমিপাকা ঘর দেখতে পান। আর কাটা পাহাড়ের পরিমাণ ৩ হাজার ঘনফুট। এছাড়া ১ হাজার ৩০৬ দশমিক ৮ বর্গফুট পাহাড় মোচন করা হয়েছে। সেখানে কাটা গাছের গুঁড়ি দেখতে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬-এর ‘খ’ ধারা অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাহাড় বা টিলা কাটতে পারবে না। তাই আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত বুধবার (১০ আগস্ট) বিকাল ৫টায় উত্তর পাহাড়তলী ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম, তাঁর স্ত্রী তাছলিমা বেগম ও কেয়ারটেকার মো. হৃদয়কে আসামি করে আকবরশাহ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসেন।

আরও পড়ুন: চকবাজারে নতুন ওসি মনজুর কাদের, বায়েজিদে যাচ্ছেন ফেরদৌস জাহান

পরিবেশ অধিদপ্তরের পাহাড় কাটা, গাছ নিধন ও সেমিপাকা ঘর তৈরির অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে আলোকিত চট্টগ্রাম টিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে সেই স্থান। এতে দেখা গেছে, আকবরশাহ থানাধীন লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন কাউন্সিলর জসিমের ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ি সমতল জায়গায় তিন রুমের সেমিপাকা স্টাফ কোয়ার্টার রয়েছে। এসব ঘর তৈরি করা হয়েছে আরো ১০ থেকে ১৫ বছর আগে। এ ঘরের পেছনেই রয়েছে সরকারি খাস পাহাড়ি জমি। খাস জমিঘেষাঁ ব্যক্তি মালিকানাধীন এ পাহাড়ি টিলার সমতলে গড়া ঘরের সামনে দিয়ে নিচের দিকে নামতেই রয়েছে ডেইরি ফার্ম। সেই ডেইরি ফার্মের সামনেই সেই জমি। এ জমি আনুমানিক ৪০ ফুট ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে এসেছে। তবে বৃষ্টির কারণে এ পাহাড়ি জমির মাটি নিচের দিকে নামলেও কাটার কোনো আলামত দেখা যায়নি।

তাছাড়া পাহাড়ধস রোধে দেওয়া হয়েছে বালির বস্তা। তার পাশেই সরকারি জমিগুলো ঝোপঝাড়ে ঠাসা হলেও এ জমিটি বৃক্ষরোপণের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে। মূলত এ ঝোপঝাড় পরিষ্কার করেই পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলাটি গায়ে টেনে নিয়েছেন কাউন্সিলর জসিম।

ওই জায়গাটিতে বৃক্ষরোপণের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১৭টি গর্ত। চারা রোপণের প্রক্রিয়া হিসেবে জৈব সার দেওয়া হয়েছে। তবে এতে পাহাড় কাটার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সেখানে তিনটি কাটা গাছের গুঁড়ি দেখা গেলেও তা অনেক পুরনো।

একই সময়ে আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি খাস পাহাড়ি জমি দখল করে দ্বিতল ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে পাহাড় কাটার আলামত রয়েছে। পাহাড় কেটে গড়া হয়েছে সেমিপাকা টিনশেড ঘর। তবে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ বা পাহাড় কাটার দিকে নজর পড়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের। এতে রয়েছে যুবদল নেতাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মানুষের দখল করা সরকারি খাস জমি। তাছাড়া পাহাড়খেকোরা প্রতি গণ্ডা লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে আসছে এসব বেদখল জমি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘যেখানে পাহাড় কাটার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আমার একটি ডেইরি ফার্ম ও একটি স্টাফ কোয়ার্টার আছে। আমার ডেইরি ফার্মের পাঁচ হাত দূরে যে জায়গাটি পাহাড় বলা হচ্ছে, ওই জায়গাটি অপরিষ্কার ছিল। প্রায় ১৫ দিন আগে সন্ধ্যার পর আমি ডেইরি ফার্ম দেখতে যাই। ওই সময় ডেইরি ফার্মের সামনে একটি বিষাক্ত সাপ পায়ের নিচে পড়ে। ওই সময় সাপটি ফার্মে ঢুকে একটি গরুকে ছোবল দেয়। গরুটি পরদিন সকালে মারা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ডেইরি ফার্ম ও স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে কোনো ধরনের পাহাড় নেই। আশপাশে সব বাগান। পরে বিষাক্ত সাপ তাড়ানোর জন্য ডেইরি ফার্মের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে স্টাফদের বলে আমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া চলে যায়। গত ৮ আগস্ট যখন আমার স্টাফরা ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে যায় তখন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে লোক এসে বলে, আপনারা কী করেন? তখন স্টাফরা গাছ রোপণ করার জন্য গর্ত করা হচ্ছে বলে জানায়। পরিবেশ অধিদপ্তর তখন কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। তখন আমি তাকে পরিবেশ অধিদপ্তরে যেতে বলি। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একটি নোটিশ দেয়। এর পরদিন শুনানিতে আসতে বলেন। শুনানিতে গেলে জায়গার সব কাগজপত্র চাইলে কাগজপত্র দেওয়া হয়। তারপর আমার স্টাফকে বাসায় চলে আসতে বলেন। ওইদিন বিকাল ৫টায় আকবরশাহ থানায় একটি মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে কাউন্সিলরকে আদালতে অভিযোগ করতে বলেন। বিষয়টি আদালত দেখবেন। আমার বা আপনার মাথা ব্যথা নয়, এটি বিচার বিভাগীয় বিষয়। আমাকে জিজ্ঞেস করার চেয়ে আদালতে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে বলেন।’

এএইচ/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!