চট্টগ্রাম রেলে ‘স্নেহাশীষের বদলির বাণিজ্য’—চিঠি গেল ডিজির কাছে

নিজের খেয়ালখুশিমত বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল জিএমের দপ্তর তাঁর এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করে তাঁকে বদলির জন্য সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম)।

তবে স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, শুধু ডিটিও হিসেবে নয়, পুরো ৩৮ বছরের চাকরিজীবনে তাঁর কোনো অনিয়মের প্রমাণ কেউ করতে পারবে না।

আরও পড়ুন: রেলে দুর্নীতির বড় ফাঁদ—বদলির ৪৮ ঘণ্টা আগে অনিয়মেই ৩২ নিয়োগ

জানা গেছে, একটি স্টেশনে সব বিভাগের লোকবল থাকার পরও অতিরিক্ত একজন পয়েন্টসম্যানকে বদলি করে পটিয়া স্টেশন থেকে সীতাকুণ্ড নিয়ে যাওয়া হয়। দুজন পয়েন্টসম্যান নিয়ে চলা পটিয়া স্টেশনে একজনের ঘাটতি দেখা দেখা দিলে স্টেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন স্টেশন মাস্টার। জনবল সংকটে ওই স্টেশনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিপরীতে সীতাকুণ্ড স্টেশনে তিনজন পয়েন্টসম্যান থাকা অবস্থায় পটিয়া স্টেশনের জসিম উদ্দিনকে সেখানে পাঠানো হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর সাতজন পিম্যান ও দুজন গেটম্যান বদলির একটি আদেশ জারি করেন ডিটিও স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত। পছন্দের স্টেশনে বদলি করতে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা (সিওপিএস) সালাউদ্দিন।

১৫ সেপ্টেম্বর ওই আদেশ বাতিল করেন সিওপিএস সালাউদ্দিন। এরপর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল আদেশে অপ্রয়োজনীয় বদলির আদেশ করতে থাকেন ডিটিও। ফলে বিভিন্ন স্টেশনে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়।

সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত সিওপিএসকে বেকায়দায় ফেলতে এমন ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন ডিটিও।

তারা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরে অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন ডিটিও। তাই ঘুষ নিয়ে ইচ্ছেমতো হয়রানি করছেন। অপ্রয়োজনীয় বদলি করছেন। স্টেশন মাস্টার ও পিম্যানের অভাবে মেইন লাইন স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ বন্ধ স্টেশনে একাধিক স্টেশন মাস্টার ও পিম্যান পদায়ন করে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, ডিটিওর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত চলছে। সম্প্রতি টাকা নিয়ে পরিবহন বিভাগের একটি বাসা সিসিএস দপ্তরের কর্মচারীকে দেওয়ার অভিযোগ রেলমন্ত্রীর কাছে যায়। বিষয়টি তদন্ত করতে মন্ত্রী পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনকে দায়িত্ব দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। তবে প্রতিবেদন দাখিলের আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি জিএম।

আরও পড়ুন: ‘২০২৩ সালের মধ্যেই শেষ হবে ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ’

অভিযোগের ব্যাপারে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত বলেন, লোকবল সংকটে রেল চলাচল চালু রাখতে আমাকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমার ৩৮ বছরের জীবনে কোনো অনিয়ম করিনি। এক বছরে পরিবহন সেক্টরকে বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে একটি সুশৃঙ্খল অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে সহকারী স্টেশন মাস্টার হিসেবে আজকের এই পর্যন্ত এসেছি। আমার কাজে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও অফিসারের গা জ্বলে। এতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি সততার সাথে কাজ করেছি বলে বুকে সাহস আছে। তারা কোনো দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারবে না, এটি আমার ওপেন চ্যালেঞ্জ।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!