কক্সবাজারে ভয় ছড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরছে পর্যটক

কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। আন্দামান সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ফলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ দেশের সবকটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা, জান-মাল ও ক্ষয়ক্ষতি রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে সেন্টমার্টিনে আজ (রোববার) সকাল থেকে বইছে ঝড়ো হাওয়া। উত্তাল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। সেন্টমার্টিন যাওয়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া দ্বীপের তিন শতাধিক নৌকা, ট্রলার, স্পিডবোট জেটিঘাটে নোঙর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কত দূরে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’—আঘাত হানবে কোথায়

অন্যদিকে সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতেও পর্যটকের সমাগম নেই। উড়ানো হচ্ছে লাল পতাকা।

রোববার (২৩ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ জানান, ঘুর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ বর্তমানে কক্সবাজার উপকূল থেকে ৭১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।

আবদুল হামিদ আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের সমাগম নেই। পর্যটকদের নিরাপত্তায় লাইফগার্ড-বিচকর্মী-ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। উড়ানো হচ্ছে লাল পতাকা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যাওয়া চার শতাধিক পর্যটককে কক্সবাজারে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। পর্যটকরা ইতোমেধ্যে কর্ণফুলী জাহাজে কক্সবাজারের পথে রয়েছে। রাত ৯টায় জাহাজটি কক্সবাজারে এসে পৌঁছানোর কথা জানান কর্ণফুলী জাহাজের কক্সবাজারের ইনচার্জ হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় আগামীকাল (সোমবার) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিনে পর্যটকের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কক্সবাজার, মোংলা, পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী জাহাজের কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সেন্টমার্টিনে যাওয়া পর্যটকদের কক্সবাজারে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দ্বীপের তিন শতাধিক নৌকা, ট্রলার, স্পিডবোট জেটিঘাটে নোঙর করা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ আঘাত হানবে বাংলাদেশেও

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সেন্টমার্টিনে সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়া বইছে। উত্তাল জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জাহাজ চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। যেসব পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করছেন তাদের জাহাজে করে কক্সবাজার ফিরে যেতে অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার জাহাজ চলাচল শুরু হবে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে স্থানীয় লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি রোধে সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল ভবনগুলো খোলা রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় নেওয়াদের জন্য শুকনো খাবার, পানিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।ৎ

যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে সবধরনের সতর্কতা ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম গঠন এবং সার্বিক বিষয়ে তদারকির জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিডি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!