কলেজছাত্র হৃদয়কে টুকরো করার কথা স্বীকার খুনিদের, শরীরের মাংস খায়নি

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে অপহরণের পর খুনের ঘটনায় জড়িত আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নগরের পতেঙ্গা ও কর্ণফুলী এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৭। এদের মধ্যে হৃদয়কে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া উচিংথোয়াই মারমাকে (২৩) পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকরা হয়। তার দেওয়া তথ্যে নগরের নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ক্যাসাই অং চৌধুরীকে (৩৬)।

গ্রেপ্তার উচিংথোয়াই মারমা রাঙামাটি জেলার কাউখালী থানার কলমপতি মংহ্লাজাই মারমার ছেলে এবং ক্যাসাই অং চৌধুরী বান্দরবান জেলার রুমা থানার আশ্রমপাড়ার মৃত ক্য থোয়াই অং চৌধুরীর ছেলে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে কলেজছাত্র খুন, পুলিশের গাড়ি আটকে অপহরণকারীকে পিটিয়ে মারল জনতা

এদিকে শিবলী সাদিক হৃদয় হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে খুনের সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তার দুআসামি।

রোববার (১ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।

অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, মুরগিকে পর্যাপ্ত খাবার না দিয়ে বাইরে বিক্রি করে দিতো খামারে কর্মরত শ্রমিকরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন খামারের ম্যানেজার শিবলী সাদিক হৃদয় (১৯)। এ কারণে কর্মরত ওই শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েকদফা বাকবিতণ্ডাও হয়। এরপর খামারের মালিক তাদের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করে দেন। তখন থেকে শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নেয় হৃদয়কে উচিত শিক্ষা দেওয়ার।

তিনি বলেন, গত ২৮ আগস্ট রাতে উমংচিং মারমা ফোন করে হৃদয়কে খামারের পাশে রাস্তায় আসতে বলে। তাদের কথামতো হৃদয় রাস্তায় আসলে আসামিরা তাকে জোর করে অটোরিকশায় তুলে নেয়। এসময় হৃদয় চিৎকার করলে আসামিরা তার মুখে গামছা বেঁধে রাঙ্গুনিয়ার একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে যায়। ওইদিন রাতে তাকে সেখানে অবরোধ করে রাখে। এরপর উমংচিং মারমার ফোন থেকে হৃদয়কে দিয়ে তার বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দরকষাকষির একপর্যায়ে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে ভিকটিম হৃদয়কে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়।

তিনি আরও বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের বাবা ও নানা ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে বান্দরবান গিয়ে অপহরণকারীদের দিয়ে আসে। তারপরও ছেলেকে ফেরত দেয়নি। ছেলেকে ফেরত না পেয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর ৬ জনের নাম উল্লেখ করে রাউজান থানায় অপহরণ মামলা করেন হৃদয়ের মা। মামলার পর রাউজান থানা পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে গণপিটুনিতে উমংচিং মারমা নামে একজন প্রাণ হারান।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে হৃদয়ের মা-বাবার হৃদয়ে রক্ত ঝরছে, খুনের ঘটনায় ২ মামলা

মাহবুব আলম বলেন, গ্রেপ্তার উচিংথোয়াই মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হৃদয়কে অপহরণের একদিন পর ২৯ আগস্ট বিকেলে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে খুন করা হয়। উচিংথোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরে। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল খামারের কাজে জড়িতরা। এদের মধ্যে উমংচিং মারমা ও অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে। উচিংথোয়াই মারমা তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনে। তাদেরকে দিয়ে হৃদয়কে খুন করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়। তারপর লাশ কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রাখে। পরে উচিংথোয়াই মারমাসহ অন্য আসামিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বাঁচতে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংস করার জন্য হৃদয়ের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে গহীন জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে চলে আসে।

মাংস খাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলেছে এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে এ ব্যাপারে তারা জানে না। তবে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটি সত্য। মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এএইচ/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!