চট্টগ্রামে কলেজছাত্র খুন, পুলিশের গাড়ি আটকে অপহরণকারীকে পিটিয়ে মারল জনতা

রাউজানে মুক্তিপণ দিয়েও লাশ হতে হলো অপহৃত কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে (২০)। গহীন অরণ্য থেকে তার লাশের কঙ্কাল ও পড়নের কাপড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৩ দিন আগে তাকে অপহরণ করে মারমা যুবকরা। অপহরণকারীদের মুক্তিপণের ২ লাখ দিয়েও জীবিত পাওয়া গেল না হৃদয়কে।

এদিকে অপহরণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে একজন উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে মারা যায়। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাপমারা গ্রামের উহ্লাপ্রুমং মারমার ছেলে আছুমং মারমা, একই জেলার কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী পাড়া গ্রামের উষাচিং মারমার ছেলে উক্যথোয়াই মারমা (১৯) ও উমংচিং মারমা (২৬)। এদের মধ্যে উমংচিং মারমা গণপিটুনিতে প্রাণ হারান।

সোমবার (২৮ আগস্ট) রাতে কদলপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি এলাকার একটি মুরগি খামার থেকে হৃদয়কে অপহরণ করা হয়। এরপর পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।

আরও পড়ুন : মুক্তিপণ না পেয়ে কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে শিশুর লাশ পুঁতে রাখা হয় শৌচাগারে

নিহত হৃদয় উপজেলার ৮ নম্বর কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়ার গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শফিক ড্রাইভারের ছেলে। তিনি কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় চেয়ারম্যান নেজাম উদ্দিন চৌধুরীসহ চারজনের মালিকানাধীন একটি মুরগির খামারে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়া নামক স্থানে গিয়ে ২ জন লোকের হাতে দাবি করা দুলাখ টাকা তুলে দেন। টাকা দেওয়ার পর তারা জানান, ছেলে সামনের অটোরিকশায় আছে। পরে ছেলেকে না দেখে পুনরায় সেই স্থানে গিয়ে দেখেন ওই লোকগুলো আর নেই। পরে তিনি বাড়ি চলে আসেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় যে মুরগির খামারে চাকরি করতেন সেখানে কয়েকজন চাকমা যুবকও চাকরি করতেন। সেখানে গত ২ মাস আগে চাকমা যুবকদের সঙ্গে তার বিবাদ হয়। পরে খামারের মালিকেরা তা মিটমাট করে দেন। কিছুদিন আগেও সেই চাকমা যুবকদের হৃদয় তাদের বাড়িতে আপ্যায়ন করেছিলেন। পরিবারের ধারণা, পূর্বের বিরোধের জেরে তাকে খুন করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোরে অপহরণকারী চক্রের মুলহোতা উমংচিং মারমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পর তার দেওয়া তথ্যে কদলপুর ইউনিয়নের আশরফ শাহ মাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার গহীন অরণ্য থেকে হৃদয়ের লাশের কংকাল ও তার পরনের কাপড় উদ্ধার করে পুলিশ ।

পরে গ্রেপ্তার উমংচিং মারমাকে নিয়ে ফিরে আসার সময় আজ সকাল ১১টার দিকে কদলপুর আশরফ শাহ মাজারের সামনে উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি আটকে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

আরও পড়ুন : দিনদুপুরেই অপহরণ—মুক্তিপণ চেয়ে পুলিশের কব্জায় ২ সন্ত্রাসী

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, শিবলী সাদিক হৃদয়ের অপহরণ ঘটনায় রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাপমারা গ্রামের উহ্লাপ্রুমং মারমার ছেলে আছুমং মারমা ও একই জেলার কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী পাড়া গ্রামের উষাচিং মারমার ছেলে উক্যথোয়াই মারমাকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে ঘটনার মুল হোতা উমংচিং মারমাকে (২৬) গ্রেপ্তার করি। জিজ্ঞাসাবাদে উমংচিং মারমার দেওয়া তথ্যে কদলপুর পাহাড়ি এলাকা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার গহীন অরণ্য থেকে শিবলী সাদিক হৃদয়ের লাশের কংকাল ও কাপড় উদ্ধার করা হয় ।

ওসি আরও বলেন, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে কদলপুর মোল্লাপাড়া এলাকায় আসলে উত্তোজিত জনতা পুলিশের গাড়ি আটকে হামলা শুরু করে এবং গাড়ি ভাঙচুর করে আসামি ছিনিয়ে নেয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার সংর্ঘষ বাধে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। একপর্যায়ে আসামিকে গণপিটুনি দিলে উমংচিং মারমার মৃত্যু হয়। এরপর পুলিশের গাড়িতে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এসএ/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!