‘করোনা’—২২ জুলাই ঘিরে শঙ্কা, চট্টগ্রামের ৪ পয়েন্ট ও ছয় স্পটে দৃষ্টি

দেশের চলমান করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ২২ জুলাই (বৃহস্পতিবার)। একদিকে শিথিল বিধিনিষেধের শেষ দিন, অন্যদিকে ‘কঠোর’ লকডাউনের আগের দিন। দুইয়ে মিলে চট্টগ্রামের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট (প্রবেশপথ) ও ছয়টি উন্মুক্ত স্পটে বড় ধরনের গণজমায়েতের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, দুই দফায় ১৪ দিন লকডাউনের পর ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে দেশে শিথিল করা হয় বিধিনিষেধ। যা চলবে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত।

এরপর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ফের থাকবে ‘কঠোর’ বিধিনিষেধ। এবারের লকডাউনে মার্কেট-গণপরিবহনের সঙ্গে এসেছে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা বন্ধের নির্দেশনাও।

এদিকে সোমবার (১৯ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে ‘কঠোর’ বিধিনিষেধের বিষয়ে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কঠোর’ বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে তিনটি সেক্টর।

এতে বলা হয়, খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত মিল-কারখানা, কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানার কার্যক্রম কঠোর বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।

এছাড়া এবারের ‘কঠোর’ বিধিনিষেধে খোলা থাকছে ব্যাংকও। আগেরবার ‘কঠোর’ বিধিনিষেধে রোববার ব্যাংক বন্ধ ছিল। এবার রোববারও ব্যাংক খোলা থাকতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ‘কঠোর’ বিধিনিষেধ চলাকালে ২৫ জুলাই (রোববার) থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ব্যাংকে লেনদেন করা যাবে। লেনদেন পরবর্তী সময়ের কাজ গোছানোর জন্য ব্যাংক খোলা রাখা যাবে দুপুর ৩টা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: ‘কঠোর’ বিধিনিষেধেও খোলা ব্যাংক, জেনে নিন সময়সূচি

যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ ২২ জুলাই

মূলত দুটি কারণে চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ২২ জুলাই। প্রথমত, সরকারিভাবে শিথিল বিধিনিষেধের এটিই শেষ দিন। সঙ্গে যোগ হয়েছে ঈদের ছুটি। তাই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নেওয়ার পাশাপাশি ঈদে বেড়ানোর শখ মিটিয়ে নিতেও দিনটিকে বেছে নিতে পারেন নগরবাসী। এতে নগরের উন্মুক্ত দর্শনীয় স্থানগুলোতে বড় ধরনের গণজমায়েতের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ঈদ উদযাপনের জন্য অনেকেই গ্রামে ফিরেছেন। ২২ জুলাই গণপরিবহন চলাচলে অনুমতি থাকায় ‘কঠোর’ বিধিনিষেধের আগে নগরে ফেরার বড় সুযোগ হয়ে এসেছে দিনটি। এ কারণে এদিন নগরের প্রধান প্রবেশপথগুলোতেও মানুষের ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের ৪ পয়েন্ট ও ৬ স্পটে দৃষ্টি

এ দফার ‘কঠোর’ বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার আগে গণপরিবহন চলাচলের শেষ দিন ২২ জুলাই। এদিকে গ্রামে ফিরেছেন অনেক মানুষ, তাদের বড় একটা অংশ এদিন ফিরতে পারেন নগরে। দুইয়ে মিলে ভিড় বাড়তে পারে নগরের চার প্রবেশপথে।

এই চারটি প্রবেশপথ হলো- নতুনব্রিজ (শাহ আমানত সেতু), কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন মোড় ও সিটি গেইট। প্রথম তিনটি প্রবেশপথ উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষের চট্টগ্রামে পৌঁছানোর প্রধান রুট। অন্যদিকে সিটি গেইট দিয়ে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার পাশাপাশি বাইরের জেলার মানুষও ঢোকেন চট্টগ্রামে। ২২ জুলাই তাই এই চার প্রবেশপথে থাকবে বিশেষ ‍দৃষ্টি।

এদিকে নগরের ছয় উন্মুক্ত স্পটেও এদিন বড় ধরনের গণজমায়েত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে ঈদের পরদিন, অন্যদিকে শিথিল বিধিনিষেধের শেষদিন হওয়ায় এই স্পটগুলোতে ভিড় থাকতে পারে বেশি।

নগরের এই ছয় স্পট হলো- বিপ্লব উদ্যান, কাজীর দেউরি, সিআরবি, হালিশহর রাসমনি ঘাট, পতেঙ্গা নেভাল রোড ও বায়েজিদ লিংক রোড। নগরের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র ও থিম পার্কগুলো বন্ধ থাকার কারণে এসব উন্মুক্ত স্পটে থাকবে প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি।

সিএমপিতে বিশেষ প্রস্তুতি

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ২২ জুলাইয়ের বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা নগরের উন্মুক্ত স্পটগুলোতে জমায়েতকে নিরুৎসাহিত করছি।

তিনি বলেন, নগরের উন্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্র ও প্রবেশপথগুলোতেও এদিন পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। সবমিলিয়ে দিনটিকে ঘিরে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২১ জুলাই) আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ৩ হাজার ৩২৫ নমুনা পরীক্ষায় ৭৯০ জনের করোনা শনাক্তের খবর জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে ৫৬১ জন নগরের এবং ২২৯ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। একইসময়ে মারা গেছেন ৪ জন করোনা রোগী। এরমধ্যে ৩ জন নগরের এবং ১ জন উপজেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রামে এ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮৬০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের মোট ৭৩ হাজার ৩৮২ নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!