জন্মদিন : অর্জনে অনন্য শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ (২৮ সেপ্টেম্বর)। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। তখন শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত অবস্থায়ই শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে আওয়ামী লীগ, যেখানে সাফল্যের সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে ৬ দফা ও পরে ১১দফা আন্দোলন এবং ৬৯এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া শেখ হাসিনার সফল দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ চার চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে।

আরও পড়ুন: ক্ষমতা ভোগের বিষয় নয়: শেখ হাসিনা

দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা, শেখ রাসেলসহ তাঁরা পাঁচ ভাই-বোন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু, মাতা ফজিলাতুন নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হয়ে পরিবার ঢাকায় নিয়ে আসেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের ভিপি (সহসভাপতি) নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: বৈশ্বিক জোট গড়ে তোলার মাধ্যমে খাদ্যের অপচয় হ্রাস করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তাঁর প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যাসন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্ম হয়।

শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রয়েছে অসামান্য কিছু অর্জন। অনেক বাধাবিপত্তি ঠেলে এগিয়ে আসা রাজনৈতিক জীবনে তিনি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এসব সাফল্যের অংশীদার হোন।

চার দফায় ১৭ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী: ১৯৯৬ সালে প্রথম তিনি সরকার গঠন করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম নির্বাচনে আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে একই বছরের ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় ও মোট তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনবার (১৯৮৬, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে)।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহারের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে

টানা ৪০ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতি: শেখ হাসিনা চল্লিশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটি একটি অনন্য অর্জন। এই ৪০ বছর তিনি শুধুমাত্র যে আওয়ামী লীগের সভাপতি আছেন তা নয়, তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত এবং দলের একজন নেতাকর্মীও মনে করেন না যে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আছে। এটি একজন রাজনৈতিক নেতার অসাধারণ প্রাপ্তি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অর্জনের একটি অনন্য দিক হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত স্বাধীনতা-বিরোধী রাজাকার, আলবদর গোষ্ঠী বাংলাদেশের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে, নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং অগ্নিসংযোগ লুটপাট করেছে তাদের বিচার ছিল সময়ের দাবি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতিহারে অঙ্গীকার করেছিলেন যে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন এবং এই অঙ্গীকার পূরণ করে তিনি বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার: ৭৫’এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই কলঙ্ক উন্মোচন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এটি করতে যেয়ে আইনের দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছেন, প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধুর বিচার শেখ হাসিনার এক অনন্য অর্জন।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন:  তাঁর নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশ ছিলো নিম্ন আয়ের দেশ। সেখান থেকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশকে মনে করা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, এটি শেখ হাসিনার নেতৃতেই সম্ভব হয়েছে।

আরও সাফল্য: মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে করোনাকালেও দেশের প্রবৃদ্ধি এশিয়ায় প্রায় সব দেশের ওপরে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তথাকথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। দেশের শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তির বাস্তব প্রমাণ মেলে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু নির্মাণে।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, সমুদ্রসীমা বিজয়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হচ্ছে, মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, এশিয়ান হাইওয়ে রোড প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে, নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ হয়েছে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য কুড়িয়েছেন সুনাম। দেশের জন্য বয়ে এনেছেন গৌরব ও সাফল্য। নারী হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার অনন্য রেকর্ড অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড ছিল। শেখ হাসিনা টানা সাড়ে ১২ বছর হলেও চার মেয়াদে এরই মধ্যে ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

এই সময়ে নিজের মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন এনেছেন। প্রতিটি সেক্টরে লাগিয়েছেন উন্নয়নের ছোঁয়া। গড়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে করেছেন রূপান্তর। সৎ ও কর্মঠের তালিকায় বিশে^র সেরা তিনে স্থান করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শুধু নিজেকেই নন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তিনি উন্নয়নের কান্ডারি।

গত এক যুগ টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত, রিজার্ভ মাত্র ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন থেকে ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত ও প্রায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত, বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ৪-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!