৮৫ বছরের ‘মা’—চিকিৎসার ভার নিচ্ছেন না ‘৪ ছেলে—মেয়ে’ কেউ

দুই মাস আগে পা পিছলে পড়ে কোমর ভাঙেন ৮৫ বছরের বিধবা বৃদ্ধা আমেনা বেগম। এরপর পাল্টে যায় তাঁর জীবনের হিসাব-নিকাশ।

৩ ছেলে ও ২ মেয়ের থাকার পরও বিনা চিকিৎসায় বিছানায় কাতরাচ্ছেন আমেনা। পরম মমতাময়ী মা যেন এখন তাদের ‘গলার কাঁটা’!

তবে দুবাই প্রবাসী ছোট ছেলে মো. নাজিম লকডাউনে দেশে আসতে পারছেন না। তিনি টাকা পাঠালেও কেউ চিকিৎসা করানোর দায়িত্ব নিচ্ছেন না।

জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলার ১৩ নম্বর দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নে ৪ নম্বর ওয়ার্ড চহুর কাজীর বাড়ির মৃত বাদশা মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম। দুই মাস আগে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙে তিনি চলাচলে অক্ষম হয়ে যান৷ পরে তাঁকে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখালে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কিংবা কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সন্তানরা খরচের ভয়ে চিকিৎসা না করিয়ে আমেনা বেগমকে ফেলে রাখে ঘরের এক কোণে। আবার বাথরুমে নেওয়ার ঝামেলা এড়াতে ছেলে ও ছেলের বউয়েরা মিলে আমেনা বেগমকে খাবারও খেতে দেন কম!

ব্যথায় কাতরাতে থাকা মুমূর্ষু আমেনা বেগমের দিন কাটছে চিকিৎসা ও খাবারের অভাবে। অথচ তাঁর বড় ছেলে মো. হারুন একজন ব্যবসায়ী। ছোট দুই ছেলে সেকান্দর ও মো. নাজিম দুবাই প্রবাসী।

আরও পড়ুন: বৃদ্ধা মায়ের অপরাধ আম খেয়েছিলেন, পাষণ্ড সন্তানরা ভেঙে দিলেন হাত

মো. নাজিম মুঠোফোনে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য ভাই, ভাবী ও বোনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি টাকা পাঠাবো বলেছি। তারপরও কেউ চিকিৎসা করানোর দায়িত্ব নিচ্ছে না। এমনকি আমি এলাকার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তারাও কেউ এ ব্যাপারে এগিয়ে আসছে না। করোনার কারণে অবস্থাও তেমন ভালো না। আয় তেমন নেই। এছাড়া আমার বউ পরকীয়ায় লিপ্ত। আমি প্রবাসে থাকায় কিছু করতে পারছি না। দয়া করে আপনারা আমার মায়ের চিকিৎসার খোাঁজ নিন।

এ অবস্থায় এলাকার কোনো ব্যক্তি ও বন্ধুদের মায়ের চিকিৎসায় এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান নাজিম। সেই সঙ্গে হাটহাজারীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদেরও সহযোগিতা চান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী বলেন, বৃদ্ধা আমেনা বেগমের অবস্থা খুবই খারাপ। ছেলের বউয়েরা তাঁর দেখাশোনা করে না। আশপাশের কাউকেও দেখতে দেয় না। এটি বড়ই অমানবিক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম বলেন, ছেলেমেয়ে স্বচ্ছল থাকার পরও আমেনা বেগমের চিকিৎসাসেবা না করানো অমানবিক এবং বেআইনি। কোনো ছেলেমেয়ে তার মায়ের চিকিৎসাসেবায় অবহেলা করতে পারে না।

বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আমেনা বেগমের চিকিৎসা নিশ্চিতের ব্যাপারে ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান ইউএনও।

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!