আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি—অভিযোগ করায় ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যান, সংঘর্ষে রক্তাক্ত ১২

বাঁশখালীতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ করায় হামলা চালিয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরীর লোকজন। এতে উভয়পক্ষে ১২ জন রক্তাক্ত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার( ৩ মার্চ) সকালে ৯টার দিকে খানখানাবাদ ইউনিয়নের সেন্টার পুকুর নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বুধবার রাতেও হামলার ঘটনা ঘটে।

এদিকে দুদফা হামলার ঘটনায় পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: রক্তাক্ত করে প্রতিবন্ধীর মোবাইল—টাকা ছিনিয়ে নিল চাচা—ভাতিজা

হামলায় গুরুতর আহত আবু তালেব (৬০), নবী হোসেন (৪০), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), নেজাম উদ্দিন (৪০), জহির আহমদ (৪০), মিজানুর রহমান (৩৭) এবং মো. আলমকে (৩৫) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে লাগোয়া সেন্টার পুকুর নামক স্থানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৬টি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছিল। এসব বাড়ি নির্মাণের অলিখিত ঠিকাদার খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী। নির্মাণকাজ তদারকি করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. ইউসুফ, ফজু আহমদ, শমশু প্রকাশ পেটুক শমশু নামের তিনজন। প্রকল্পের কাজের শুরু থেকে লবণাক্ত বালি, নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট এবং লোহার রড ব্যবহার করার অভিযোগ করে আসছিল গ্রামবাসী।

অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার রাত ৮টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী এবং উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. রিয়াদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা নবী হোসেন ও খোরশেদ আলম এ সময় অভিযোগ করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক নির্মিত পিলার ভাঙা হলে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়।

এরপর উপজেলা কর্মকর্তারা ফিরে যাওয়ার পর বুধবার রাতে অভিযোগকারী নবী হোসেন ও মো. খোরশেদের ওপর হামলা চালায় তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. ইউসুফ, ফজু আহমদ ও শমশু প্রকাশ পেটুক শমশু।

আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে এলোপাতাড়ি কোপে রক্তাক্ত যুবলীগ নেতা

পরদিন আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় চেয়ারম্যানের লোকজন প্রকাশ্যে কিরিচ, লোহার রড নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়। এ সময় হামলায় আহত নবী হোসেন ও মো. খোরশেদের লোকজন প্রতিবাদ করলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে দুপক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মো. ইউসুফ, ফজু ও শমশু আমার লোক নয়। তাদের সঙ্গে নবী হোসেন ও মো. খোরশেদের আগে থেকে বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের জেরে হামলার ঘটনা হয়েছে। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

যোগাযোগ করা হলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর পিলার ভেঙে লোহার রড বের করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে নয়, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাউকে দুর্নীতি করতে দেওয়া হবে না।

যোগাযোগ করা হলে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আবু জাফর মো. শাহ আলম বলেন, সকালে হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত।

উজ্জ্বল/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!