‘রাতের রাজা’—ছিনতাইয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন শহরে, অপারেশন সেরে যেতেন মাজারে

রাত ১০টা বাজলেই ছিনতাই করতে প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুরে বেড়ান তারা। এরপর সুযোগ বুঝে হানা দেন জরুরি প্রয়োজনে খোলা রাখা দোকান ও পথচারীদের ওপর। জিম্মি করে লুটে নেন সবকিছু। ছিনতাইয়ে সফল হলে তারা মানত পূরণ করতে যান মাজারে।

এভাবেই নগরে ও নগরের বাইরে ছিনতাই করে বেড়ায় তারা। তারা মূলত আফ্রিকান ফিল্ম দেখে ছিনতাইয়ের কৌশল রপ্ত করেছেন। তবে আফ্রিকান ফিল্মি স্টাইলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ছিনতাইচক্রের চার সদস্য ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে।

গ্রেপ্তার হওয়া ছিনতাইকারীদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) উত্তর বিভাগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব ছিনতাইকারীর চাঞ্চল্যকর তথ্যগুলো দেন উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান।

গ্রেপ্তার চার ছিনতাইকারীরা হলো- রাঙ্গুনিয়ার রানিরহাট বগারবিলের মো. জামালের ছেলে মো. সোহেল (৩০), জঙ্গল সলিমপুর লতিফনগরের মো. শফি আলম ওরফে শামসুল আলমের ছেলে কামাল উদ্দীন ওরফে মহিউদ্দীন (২৮), সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী খাদেমপাড়া আমির কোম্পানি বাড়ির মো. সুলতান আহমেদের ছেলে মো. তানভীর ইসলাম রোকন উদ্দীন (২৭) এবং নোয়াখালী সদরের নোল্লা বাজার লাল মিয়া সওদাগর বাড়ির মৃত শফিক উদ্দীনের ছেলে বেলাল হোসেন আসলাম (২৭)।

আরও পড়ুন: প্রবাসী নারীর ৩২ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই, ব্ল্যাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর—গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান বলেন, নগরে রাত ১০টার পর যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে এলে ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করতে প্রাইভেটকার নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এরপর সুযোগ বুঝে পথচারী ও জরুরি প্রয়োজনে খোলা থাকা বিভিন্ন দোকানে ঢুকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। কেউ বাধা দিলে অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখায়।

তিনি আরো বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টার দিকে নগরের অলংকার মোড় থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে ছিনতাইকারীরা। গাড়ি ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড এলে প্রাইভেটকারের চালক ইলিয়াছকে জিম্মি করে ফেলে। এরপর তার বাবাকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ইলিয়াছের বিকাশ নম্বরের পাসওয়ার্ড ও ফোন কেড়ে নেয়। এমনকি ছিনতাইয়ে সফল হতে ফটিকছড়ি বাজারে গিয়ে একটি মাজারে মানতও করে তারা।

এরপর গত ৬ ফেব্রুয়ারি ওষুধ কিনতে ছিনতাইকারী দলের এক সদস্য যায় বায়েজিদ বোস্তামী কাঁচাবাজার এলাকার ফার্মেসিতে। এরপর বাকি তিনজনও ঢুকে পড়ে দোকানে। ফার্মেসির মালিক-কর্মচারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুট করে নেয় ৭০ হাজার টাকা, একটি ট্যাব ও একটি মোবাইল ফোন। তারপর মুরাদপুর এলাকা থেকে এক রিকশাযাত্রীর মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) আরাফাতুল ইসলাম বলেন, মুরাদপুরে ছিনতাই শেষে প্রাইভেটকারটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পার্কিং করে রাখে ছিনতাইকারীরা। গাড়ি সেখানে রাখলে কেউ সন্দেহ করবে না ভেবেই ওই জায়গাটি বেছে নেয় তারা। এরপর রাত ৮টায় পুনরায় ছিনতাই করার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে একত্রিত হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার পর থেকে নগরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে প্রায় ডজনখানেক ছিনতাই করে তারা।

আরও পড়ুন: ‘মাত্র ২০ সেকেন্ডে ছিনতাই’ অটোরিকশা টার্গেট করে টাকা কামায় বৌ-জামাই

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে একটি নেভি ব্লু প্রাইভেটকার, কাঠের বটিযুক্ত দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান, চার রাউন্ড কার্তুজ, একটি স্টিলের তৈরি টিপ ছোরা, ১০টি মোবাইল, একটি ট্যাব ও নগদ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাঁচলাইশ জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. শাহ আলম, পরিদর্শক মো. খাইরুল ইসলাম, বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজহারুল ইসলাম, রানা প্রতাপ বণিক ও শাহ আলম, উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মো. আব্দুল মালেক ও আল আমিন।

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!