রাউজানে ফের সক্রিয় শীর্ষ সন্ত্রাসীরা, দুর্গম পাহাড়ে ধরা খেল ধামা ইলিয়াছ

রাউজানে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে তারা আস্তানা গেড়েছে দুর্গম পাহাড়ে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশ ধারণ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে।

এদিকে আত্মগোপনে থাকা তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানো সহযোগীদের ধরতে মাঠে নেমেছে রাউজান থানা পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। গোপন সংবাদ পেলেই চালোনা হচ্ছে অভিযান।

মঙ্গলবার (২০ মে) রাত দেড়টার দিকে গোপন সংবাদে কদলপুর দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কদলপুর ঈশান ভট্টের হাট থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ধামা ইলিয়াছকে (৪৬) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ধরা পড়ে তার দুসহযোগী আনোয়ার হোসন বাছুল (৩৭) ও কামরুল হাসান শাকিল (২১)। তাদের কাছ থেকে বন্দুক, কার্তুজ, দেশীয় তৈরি অস্ত্র, কিরিচ ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (২৪ মে) দুপুরে গ্রেপ্তারদের আদালতে সোর্পদ করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ধামা ইলিয়াছের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় হত্যা অপহরণসহ ৮টি মামলা রয়েছে। তার দুসহযোগী আনোয়ার হোসেন বাছুলের বিরুদ্ধে ৬টি এবং কামরুল হাসান শাকিলের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। কদলপুর পাহাড়ি এলাকায় গোপন আস্তানায় থেকে তারা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে আসছিল।

আরও পড়ুন: রাউজানে ৪ ডাকাতসহ পুলিশের জালে ৭, অস্ত্র উদ্ধার

ধামা ইলিয়াছ কদলপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাধ্যম কদলপুর উত্তর শমমেরপাড়া এলাকার মৃত নুরুল আমিনের ছেলে। আনোয়ার হোসেন বাছুইল্যা একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আমিরপাড়া এলাকার আবদুস সালামের ছেলে এবং কামরুল হাসান শাকিল ৭ নম্বর ইউনিয়নের নাতোয়ান বাগিচা এলাকার দিদারুল আলমের ছেলে।

জানা গেছে, ডাবুয়া ইউনিয়নের হিংগলা এলাকার আবদুল মোনাফের ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী আজিজুল হক বর্তমানে ওমানে এবং ফজল হক সৌদি আরবে আত্মগোপনে আছেন। এছাড়া বিধান বড়ুয়া, কামরুল হাসান টিটু দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী। তবে ওমানে থাকা আজিজুল হকের সহযোগীরা চট্টগ্রাম নগর ও রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে ঘুরছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী আজিজুল হকের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্মীয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পদে আছেন। আজিজুল হকের সহযোগী মানিক্যা, নুরুল ইসলাম, জহুর মিয়া, সুরমা ফজল, নেজাম, আমির, হলদিয়া ইউনিয়নের এয়াসিননগর এলাকার দুলাল, চিকদাইর ইউনিয়নের দক্ষিণ সর্তা এলাকার বাসিন্দা মৃত আবদুর রহমানের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম প্রকাশ বাঁচাইয়া, দেলোয়ার, গহিরা দলইনগর এলাকার এখতেয়ার উদ্দিন সুনইক্যা, ৭ নম্বর ইউনিয়নের আমিনুর রহমানের ছেলে শাহ আলম সাহাইয়্যা ও কদলপুরের হারুন চট্টগ্রাম নগরে আত্মগোপনে আছেন।

এছাড়া পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের কাগতিয়ার ডাকাত বজল, সন্ত্রাসী জুম্মইয়্যা, বদুমুন্সিপাড়ার রমজান আলী, সহযোগী ফরিদ, মগদাইরের ডাকাত পারভেজ, কদলপুর ভোমরপাড়ারা বাসিন্দা বুয়েট ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি হত্যা মামলার মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোকামেল হায়াত খান মুকি, ডাকাত আলম, পূর্ব গুজরা আধারমানিক এলাকার বাসিন্দা ডাকাত আফজল, বড় ঠাকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাহেদ, জসিম, চইক্যা, উরকিরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা সন্ত্রাসী মুন্না চট্টগ্রাম নগর ও রাউজানের বিভিন্ন উপজেলায় আত্মগোপনে আছেন।

রাউজান হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তরসর্তা এলাকার বাসিন্দা মরহুম রাজা মিয়ার ছেলে সন্ত্রাসী শফিকুল ইসলাম ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলার অন্যতম আসামি । তিনি চট্টগ্রাম নগরে আত্মগোপনে আছেন। পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাই এলাকার বাসিন্দা ডাকাত পারভেজের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১১টি মামলা রয়েছে।

জানা যায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী ফজল হক সৌদি আরব চলে গেলেও তাঁ সহযোগীরা চট্টগ্রাম নগর ও রাউজানের বিভিন্ন উপজেলায় ছদ্মবেশে আছেন। পাঁচ বছর আগে নোয়াপাড়া চৌধুরীহাট এলাকায় যুবলীগ নেতা মোবারককে গুলি করে হত্যা এবং ১ বছর আগে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়াকে হত্যার চেষ্টা চালায় ফজল হকের সহযোগীরা।

এরপর বাবুল চেয়ারম্যানকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত ফজল হকের সহযোগী কামরুল হাসান টিটু, সাদ্দাম ও আবছারকে রাউজান থানা পুলিশ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। বর্তমানে ফজল হকের সহযোগী আবু তাহের ও তৈয়ব চট্টগ্রাম নগরে আত্মগোপনে আছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন জেলে থাকা সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়া ও ডাকাত আলমও জামিনে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে আজিজুল হক ও র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত ডাকাত আলমকে রাউজানের পাহাড়ি এলাকা থেকে দুবছর আগে গ্রেপ্তার করা হয়। রাউজান থানার তৎকালীন ওসি কেফায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে সেই অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কদলপুর পাহাড়ি এলাকা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ডাকাত ধামা ইলিয়াছ এবং তার সহযোগীদের গত মঙ্গলবার (২৪ মে) রাত ১টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বন্দুক, কার্তুজ, দেশীয় তৈরি অস্ত্র, কিরিচ ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

ওসি আরও বলেন, আত্মগোপন ও ছদ্মবেশে থাকা সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের সদস্যরা যাতে এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠতে না পেরে সেজন্য আমরা সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এছাড়া আমাদের গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের অবস্থান জানামাত্রই তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। শান্তির জনপদ রাউজানে অপরাধীদের কোনো ঠাঁই নেই।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!