যুবলীগ নেতার চোখ এবার লবণমাঠে, রক্তাক্ত চাষিদের চোখে ভীতির পানি

কক্সবাজারের পেকুয়ায় লবণমাঠে বিরাজ করছে আতঙ্ক। যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে লুট করা হয়েছে এক প্রতিবন্ধী চাষির আড়াইশ মণ লবণ। এ ঘটনায় দুদফা হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন ৬ চাষি।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে ও শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বামুলাপাড়া গ্রামে দুদফা এ হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহতরা হলেন- ফরিদ উদ্দিন (৫০), আব্দুল কুদ্দুস (৪০), তাঁর ছেলে মো. নোমান (১৫), মো. আজম (২৮), সিকদার (২২) ও বদিউল আলম (৪০)।

আরও পড়ুন: যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতার মামলা

লবণ চাষিরা জানান, দুদফা হামলা চালিয়ে উৎপাদিত আড়াইশ মণ লবণ লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। এতে ছয়জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে মো. আজমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে মৃত গোলাম শরীফের ছেলে প্রতিবন্ধী কৃষক ফরিদ উদ্দিনের মাঠ থেকে আড়াইশ মণ লবণ লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এর প্রতিবাদ করলে পরদিন শুক্রবার দুপুরে লবণ চাষি ফরিদ উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুস ও তাঁর ছেলে মো. নোমানকে মারধর করে আহত করা হয়।

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন কৃষক ফরিদ। এর জের ধরে সন্ত্রাসীরা ফরিদের প্রতিবেশী মো. আজম, সিকদার ও বদিউল আলমকে ধরে গিয়ে তাদের মারধর করে।

ভুক্তভোগী ফরিদ উদ্দিন বলেন, এরশাদ আলী ওয়াকফ এস্টেটের ইজারাদার নুরুল আবছারের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে আমি লবণ চাষ করেছি। দুমাস চাষ করার পর বিক্রির জন্য লবণ জমিয়ে রেখেছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে সন্ত্রাসীরা এসে আমার সব লবণ লুট করে নিয়ে যায়। এর প্রতিকার চাইলে সন্ত্রাসীরা আমাকে মারধর করে। আমাকে এলাকাছাড়া করবে বলে হুমকি দিয়েছে।

আরও পড়ুন: বোয়ালখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দরপত্র কেড়ে নিলেন যুবলীগ নেতা

আরেক ভুক্তভোগী বদিউল আলম বলেন, রাজাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল ইসলাম টিপুর নেতৃত্বে জেলফেরত চিহ্নিত সন্ত্রাসী জয়নাল, আনছার, বাদশা, বদি আলম, আব্বাস, নুরুল আলম, শফি আলম, এহসান, আমির হোছাইন, খোকন, আমিন ও হাছান জিম্মি করে রেখেছে এস্টেটের দুশতাধিক লবণ চাষিকে। তাদের অবিচারের প্রতিবাদ করলে চালানো হয় নির্যাতন। তাদের ভয়ে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জমির ইজারাদার পেকুয়া উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, এরশাদ আলী ওয়াকফ স্টেটের মোতোয়াল্লি ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে আমি ও নবী হোসেন ৫৪ একর লবণমাঠ ইজারা নিয়েছি। কিন্তু চাষিরা মাঠে উৎপাদিত লবণ বিক্রি করতে পারছে না। যুবলীগ নেতা আনসারুল ইসলাম টিপুর নেতৃত্বাধীন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী চাষিদের উৎপাদিত লবণ বিক্রি করতে বাধা দিচ্ছে। রাতে লবণ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে কৃষকদের মারধর করা হচ্ছে।

এদিকে কৃষকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবলীগ নেতা আনসারুল ইসলাম টিপু। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এস্টেটের মোতোয়াল্লীর কাছ থেকে আমি জমির কিছু অংশ ইজারা নিয়েছি। এসব জমিতে আমার চাষারা লবণ চাষ করছে। আমার সঙ্গে লবণ চাষিদের সংঘাত হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রটানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, লবণ চাষিদের মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: যুবলীগ নেতা সেজে—সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জিকুর, গুলি ছুড়েন ‘শোকের অনুষ্ঠানেও’

চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তফিকুল আলম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি রাজাখালী এরশাদ আলী ওয়াকফ এস্টেটের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ওপর কোনো অন্যায় হতে দেওয়া হবে না।

এ ব্যাপারে এরশাদ আলী ওয়াকফ এস্টেটের মোতোয়াল্লি ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ইজারাদারদের জমি চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। একজন অন্যজনের জমিতে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

মুকুল/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!