চট্টগ্রামে মৃত্যুঝুঁকি বেশি ‘বহদ্দারহাট টু শাহ আমানত সেতু সড়কে’

চট্টগ্রামে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৬৩ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২০২১ সালে। ওই বছর প্রাণ হারান ১০৩ জন। এছাড়া ২০২০ সালে ৬৭ জন এবং ২০২২ সালে প্রাণ হারিয়েছেন ৯৩ জন।

নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বায়েজিদ থানায়। এখানে তিন বছরে ৩৫ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন। অপরদিকে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে চকবাজার থানায়। এ এলাকায় ৪ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪ জনের।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) প্রকাশিত চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় সিএমপির কনফারেন্স হলে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, প্রকৌশল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কর্মরত অংশীজনদের উপস্থিতিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) পোগ্রামের আওতায় বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংস্থা ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সহায়তায় সিএমপি ও সিসিসি যৌথভাবে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে বাড়ছে আত্মহনন, যে কারণে ইপিজেডে সবচেয়ে বেশি ‘আত্মহত্যা’

প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরের ১৬ থানা এলাকায় বসবাসকারীদের প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়ে ২০২০ সালে ২ দশমিক ১ থেকে ২০২২ সালে ২ দশমিক ৯ জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে পথচারীরা। নিরাপদে হাঁটার মতো সড়ক পরিকাঠামো না থাকায় মোট মৃত্যুর ৫৬ শতাংশই পথচারী। এর বাইরে দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক-যাত্রী, ১২ শতাংশ থ্রি-হুইলার চালক-যাত্রী এবং ৩ শতাংশ সাইকেল চালক।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত তিন বছরে নগরে ২৪৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বায়েজিদে সবচেয়ে বেশি এবং কম চকবাজার থানা এলাকায়। বায়েজিদে ৩৫টি ঘটনায় ৩৫ জন, বাকলিয়ায় ২৫ ঘটনায় ২৮ জন, বন্দরে ২৫ ঘটনায় ২৬ জন, চান্দগাঁওয়ে ২২ ঘটনায় ২২ জন, কোতোয়ালীতে ২০ ঘটনায় ২০ জন, পতেঙ্গায় ২০ ঘটনায় ২০ জন, আকবরশাহে ১৭ ঘটনায় ১৮ জন, পাহাড়তলীতে ১৫ ঘটনায় ১৮ জন, কর্ণফুলীতে ১৩ ঘটনায় ১৬ জন, ইপিজেডে ১২ ঘটনায় ১৪ জন, হালিশহর ১২ ঘটনায় ১২ জন, খুলশীতে ৯ ঘটনায় ১০ জন, ডবলমুরিংয়ে ৮ ঘটনায় ৮ জন, পাঁচলাইশে ৬ ঘটনায় ৬ জন, সদরঘাট ৫ ঘটনায় ৫ জন, চকবাজারে ৪ ঘটনায় ৪ জন মারা গেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘনায় মৃত্যুর ৮১ শতাংশই পুরুষ। তাদের অধিকাংশ ২০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী। এদের মধ্যে ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের বেশিরভাগ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এছাড়া মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ নারী।

প্রতিবেদনে সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়কসহ ১০টি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও সড়ক চিহ্নিত করা হয়েছে। শহরের সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়ক বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক। সেখানে গত তিন বছরে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় দুর্ঘটনায় পাঁচটি করে মৃত্যু হয়েছে। এরপর টাইগারপাস মোড় এবং আউটার রিংরোডের খেজুরতলা এলাকা। তিন বছরে সেখানকার ২৫০ মিটারে পাঁচজন মারা গেছে। এছাড়া বাকি স্থানগুলো হলো- অক্সিজেন মোড়, জিইসি মোড়, নতুন ব্রিজ, বাস স্টেশন, বায়েজিদ বাইপাস সিএনজি স্টেশন, কালামিয়া বাজার বাস স্টেশন, নতুন চান্দগাঁও থানা পুরবী বাস স্টেশন, সিএন্ডবি সার্কেল ও বালুছরা দৌলতশাহী কনভেনশন।

দুর্ঘটনা কমাতে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে-বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ, পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফুটপাত প্রশস্ত করা, উচুঁ ক্রসওয়াক নির্মাণ, গতিরোধক স্থাপন ইত্যাদি। এছাড়া মোটরচালিত গাড়ির পরিবর্তে বাইসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা এবং বেপরোয়া ড্রাইভিং নিয়ন্ত্রণ করতে শহরে বাস রুট রেশনালাইজেশনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (এডমিন এবং অর্থ) এমএ মাসুদ, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এএসএম মাহতাব এবং অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল মান্নান।

আরও উপস্থিত ছিলেন ব্লুমবর্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) উদ্যোগ সমন্বয়কারী মো. আব্দুল ওয়াদুদ, বিআইজিআরএস’র নজরদারি সমন্বয়কারী কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামসহ সিএমপির বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তা, চউক ও সওজের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি।

এনইউএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!