মন্ত্রীর কাছে নিহত ৬ ছেলের মায়ের ফরিয়াদ—হত্যার বিচার দেখতে চান

সড়কে পিকআপ চাপায় প্রাণ হারানো সেই ছয় সহোদরের বাড়িতে গেলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। মঙ্গলবার (১ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে প্রতিমন্ত্রী কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটের হাসিনাপাড়ার প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের বাড়িতে যান। এ সময় তিনি নিহত ছয় ভাইয়ের মা-স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজ-খবর নেন এবং গভীর সমবেদনা জানান।

পরে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিগ্রস্ত আট পরিবারের হাতে মোট ৪ লাখ টাকার চেক তুলে দেন একই সময় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি জাফর আলমের সহধর্মীনি শাহেদা জাফরের পক্ষ থেকেও নগদ এক লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়।

ছয় সন্তান হারানো হতভাগ্য মা মৃনালীনি বালা সুশীল মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, আমরা কি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার পাবো? আমাদের কিছুই চাওয়ার নেই। আমি জীবিত থাকতে যাতে আমার ছয় সন্তানের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি।

আরও পড়ুন: সড়কে প্রাণ হারানো ছয় ভাইয়ের স্বজনদের দেখতে কাল চকরিয়া আসছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

পরে প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘাতক পিকআপ জব্দ করেছে। পাশাপাশি গাড়ির মালিক ও চালককেও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করি জঘন্যতম এই ঘটনার সুষ্ঠু এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে।

পরে প্রতিমন্ত্রী চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত নিহত স্বজনদের পরিবারের কাছে চেক হস্তান্তর ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং মর্মস্পর্শী। সরকারের পক্ষ থেকে হাজার কোটি টাকা অনুদান দিলেও ছয় সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না। স্বজন হারানোর বেদনা কি তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন এবং বোঝেন। সেজন্য তিনি এই ঘটনার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে খবর নিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এসেছি।

আরও পড়ুন: চকরিয়ায় ৫ ভাই নিহত—ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার ঘাতক চালক

তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য জমিসহ বাড়ির ব্যবস্থা করেছেন। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মৃত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের একমাত্র সন্তান প্লাবন সুশীলসহ নিহত ছয়জনের স্ত্রীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. রাহাত উজ জামানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত পাল, সাবেক সচিব ও ট্রাস্টি অশোক মাধব রায়, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া এবং ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর।

আরও পড়ুন: ‘রক্তাক্ত চকরিয়া’—ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৩০

এদিকে সোমবার (১ মার্চ) রাতে চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের পূর্বপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে ওই ঘাতক পিকআপের মালিক মাহমুদুল করিম প্রকাশ বাদলকে (৪২) গ্রেপ্তার করে পিবিআই কক্সবাজারের ইন্সপেক্টর মো. এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল। গ্রেপ্তার মাহমুদুল করিম প্রকাশ বাদল ওই এলাকার মৃত শামসুল আলমের ছেলে।

পিবিআই কক্সবাজারের ইন্সপেক্টর মো. এনামুল হক চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পাই ওই পিকআপের মালিক চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় অবস্থান করছে। কিন্তু আমরা অভিযানের যাওয়ার খবরটি তিনি বুঝতে পেরে চকরিয়া উপজেলা পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের পূর্বপাড়ার নিজ বাড়িতে চলে আসেন।

পরে খবরটি জানতে পেরে রাতেই তার বাড়িতে অভিযানে যাই। মঙ্গলবার রাতেই গাড়ির মালিক মাহমুদুল করিম প্রকাশ বাদলকে গ্রেপ্তার করি। তাকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওই গাড়ির চালক সাহেদুল ইসলাম সাইফুলকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব-১৫।

মুকুল/এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!