বড়পোলে মাদক জুয়া চাঁদাবাজি জায়গা দখল—সবকিছুই হয় কাদেরের ইশারায়

বড় বড় রাজনৈতিক নেতার হাত আছে তাঁর কাঁধে। তাই কাউকে পরোয়া করেন না তিনি। থানা-পুলিশও নাকি তাঁর পকেটে। যদিও বাস্তবে রাজনৈতিক কোনো পদ-পদবি নেই তাঁর। তবে বড়পোলের ‘পাতি’ নেতা নামে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে তাঁর। আবার তাঁকে কেউ চেনেন ‘টোকাই’, আবার কেউ ‘মেন্টাল’ হিসেবে।

সেই ‘বহুরূপী’ ব্যক্তির নাম মো. কাদের। তিনি বন্দর থানার বড়পোলে সরকারি জায়গা দখল, চাঁদা, মাদক ও জুয়ার স্পটের নিয়ন্ত্রক। এসব নিয়ন্ত্রণ করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় তাঁর। এলাকায় গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং। থানা-পুলিশকেও দেন মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা।

স্থানীয়রা বলছেন, বড়পোলে সরকারি জায়গা দখল ও চাঁদাবাজি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কাদেরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। কাদের এলাকায় প্রকাশ্যে বলেন, বন্দরের এসি-ডিসি আমার পকেটে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বড়পোলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন কাদের নামের নতুনপাড়ার এক স্থানীয় যুবক। তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় ৫০টি দোকান ও ট্রাক স্ট্যান্ড। প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। ট্রাকপ্রতি আদায় করা হয় ২০০ টাকা। আবার জুয়ার বোর্ড বসিয়ে প্রতিদিন আদায় করা হয় ৫ হাজার টাকা।

টাকার অঙ্ক হিসাব করে দেখা যায়, ৫০টি দোকান থেকে দৈনিক চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা। মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে ট্রাক স্ট্র্যান্ডে রয়েছে প্রায় ৭০টি গাড়ি রাখার জায়গা। এতে প্রতিদিন ৪০টি গাড়ি থেকে দিনে চাঁদার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার টাকা। মাসে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে এই সড়ককে কেন্দ্র করে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজি চলছে। আর এসব চাঁদার ভাগ পায় স্থানীয় প্রশাসন, লোকাল মাস্তান ও কাউন্সিলরের বাহিনী।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাদেরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বড়পোল নতুনপাড়া এলাকার স্থানীয় যুবক আবিদ আনোয়ার বলেন, কাদের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবিকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। এলাকায় তাঁর রয়েছে শক্তিশালী কিশোর গ্যাং। এই গ্যাংকে ব্যবহার করে প্রকাশ্যে জুয়া, মাদক ও সরকারি জায়গা দখল করে দোকান ও ট্রাক স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া থানা পুলিশকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, গণমাধ্যমে চাঁদাবাজি নিয়ে সংবাদ প্রচারের পরও প্রকাশ্যেই ঘুরছেন কাদের। থানা-পুলিশের সদস্যরা প্রতিদিন কাদেরের সঙ্গে চায়ের আড্ডা ও খোশগল্পে মেতে উঠেন এলাকায়।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের বন্দর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এসব বিষয়ে আমার জানা নেই। মাদক, জুয়া ও চাঁদাবাজিতে জিরো টলারেন্স। যদি কেউ এসব কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম নগর থেকে আরও পড়ুন

 

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!