পাপ্পীর সাম্রাজ্যে পুলিশের হানা, চলছে গায়ের জোরে আটকে রাখা যন্ত্রপাতি উদ্ধার অভিযান

আদালতের নির্দেশের পর আওয়ামী লীগ নেতা মনছুর আলম পাপ্পীর আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে বাকলিয়া থানা পুলিশ।

বুধবার (৩১ আগস্ট) বেলা ১২টা থেকে কর্ণফুলী থেকে শুরু করে বোয়ালখালী পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়। তবে সরঞ্জামগুলো বেশ বড় আকৃতির হওয়ায় উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে।

অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার এসআই একেএম জালাল উদ্দিন।

তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সংশ্লিষ্ট আলামত যেখানে আছে সব জায়গায় সরঞ্জাম উদ্ধারের কাজ চলমান। এ কাজে বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ সহায়তা করছেন। এ পর্যন্ত তিনটি ড্রেজার উদ্ধারের কাজ চলছে। বাকি দুটি পানিতে ডুবন্ত আছে। বেশকিছু পাইপও উদ্ধার করা হয়েছে। পুরনো ফিটিংস হওয়ায় পাইপগুলো খুলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অভিযান শেষে পুরো বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।

আরও পড়ুন: সেই পাপ্পীকে ধরতে আদালতের নির্দেশ, উদ্ধার করতে হবে কোটি টাকার যন্ত্রাংশও

এর আগে সোমবার (২৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে প্রতারণার ফাঁদ পেতে কোটি টাকার যন্ত্রাংশ আত্মসাতের দায়ে মনছুর আলম পাপ্পীকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। একইসঙ্গে আত্মসাখ করা সরঞ্জাম উদ্ধার করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

পাপ্পী

জানা গেছে, গত বছরের ১২ আগস্ট আমরিন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মনছুর আলম পাপ্পীর সঙ্গে দুবছরের জন্য বালি উত্তোলনের সরঞ্জাম ভাড়ার চুক্তি করেন পিএসপি মেরিন সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী ক্যাপ্টেন কেএম হাফিজুর রহমান।

চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদী থেকে লোডিং করে পূর্ব কালুরঘাট, পশ্চিম কালুরঘাট, সিঅ্যান্ডবি, নতুন ব্রিজ, ১২ নম্বর, ভেল্লাপাড়া, পটিয়া সংলগ্ন জায়গায় বালি আনলোডিং করা হবে। এতে প্রাথমিকভাবে নতুন ব্রিজের জন্য দৈনিক ২৫ হাজার ঘনফুট বালি সরবরাহ করা হবে মর্মে প্রতি ঘনফুট বালির জন্য ২ টাকা ৩০ পয়সা ভাড়া মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যা প্রতি মাসে ১৭ লাখ টাকার বেশি।

চুক্তি অনুযায়ী, আট লাখ টাকা যন্ত্রাংশ মেরামত বাবদ পরবর্তী সময়ে খরচে সমন্বয় করার কথা। এরপর একই বছরের ৭ অক্টোবর এমভি মরিয়ম নামে আরেকটি আনলোডিং ড্রেজার পাইপসহ ১ টাকা মূল্যে ভাড়ার চুক্তি হয়। সর্বমোট ১২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ৪০ ফুটের ৯৮টি পাইপ তাঁকে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কেএম হাফিজুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পিএসপি মেরিন সার্ভিসেসের এমবি আফিয়া ইবনাত ও এমবি বন্নি (১২ ইঞ্চি আনলোডিং এবং লোডিং ড্রেজার) এমবি ওয়াস্তাবির-২ ও এমবি নিলয় ফায়াজ নামে দুটি বাল্কহেড ড্রেজারসহ আনুষঙ্গিক ইক্যুইপমেন্ট ভাড়ার চুক্তি করি পাপ্পীর সঙ্গে। এক মাস পর থেকে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তিনি চার মাস পর কাজ শুরু করেন। দুটি ইক্যুইপমেন্ট ব্যবহার করে দৈনিক টাকা তুলে নিয়ে যেতেন। আমাদের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও তিনি কোনো পেমেন্ট আমাকে করেননি।

আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতাধর’ পাপ্পির সঙ্গে ব্যবসা করেই ফেঁসে গেছেন ক্যাপ্টেন হাফিজুর, অস্ত্রের ভয়ও দেখান

তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় গত ১০ মাসে আমার প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি ৬২ লাখ ২৪ হাজার ২৮০ টাকার ক্ষতি হয়। গত ৯ মে পাঁচটি ইকুইপমেন্টের মধ্যে তিনটি ফেরত চেয়ে নোটিশ পাঠায়। কিন্তু তিনি এর কোনো সদুত্তর দেননি। তাছাড়া ব্যাবসায়িক বৈঠকে বসলে পাপ্পী তার সহচরদের বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ গাড়িতে লোড কর।’ এসব বলে তিনি ভয় দেখানোর চেষ্টা করতেন।

তিনি আরও বলেন, পাপ্পীর এমন কর্মকাণ্ডে ১৭ জুলাই বাকলিয়া থানায় জিডি করি। এ বিষয়ে গত ৪ আগস্ট ক্যাপ্টেন কেএম হাফিজুর রহমান আদালতে হাজির হয়ে মামলা করলে বাকলিয়া থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন আদালত। গত ২৪ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার এসআই একেএম জালাল উদ্দিন।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!