সেই পাপ্পীকে ধরতে আদালতের নির্দেশ, উদ্ধার করতে হবে কোটি টাকার যন্ত্রাংশও

প্রতারণার ফাঁদ পেতে কোটি টাকার যন্ত্রাংশ আত্মসাত করা বোয়ালখালী থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পরিচয় দেওয়া মনছুর আলম পাপ্পিকে গ্রেপ্তারের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এর আগে ২৯ আগস্ট এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আলোকিত চট্টগ্রাম। যার শিরোনাম ছিল— ‘ক্ষমতাধর’ পাপ্পির সঙ্গে ব্যবসা করেই ফেঁসে গেছেন ক্যাপ্টেন হাফিজুর, অস্ত্রের ভয়ও দেখান।

এদিকে আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওসমান গণি বিষয়টি নিশ্চিত করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সাবেক মেরিন কর্তা ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি ভঙ্গ করে ড্রেজার, বাল্কহেডসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম আত্মসাতের চেষ্টা করায় মনছুর আলম পাপ্পিকে গ্রেপ্তারের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে আত্মসাৎ করা ইকুইপমেন্ট উদ্ধার করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীর কিল-ঘুষিতে রক্তাক্ত ২ সাংবাদিক

তিনি আরও বলেন, গত ৪ আগস্ট ক্যাপ্টেন কেএম হাফিজুর রহমান আদালতে হাজির হয়ে মামলা দায়ের করলে বাকলিয়া থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন আদালত। গত ২৪ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার এসআই একেএম জালাল উদ্দিন।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ আগস্ট আমরিন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মনছুর আলম পাপ্পীর সঙ্গে দুবছরের জন্য বালি উত্তোলনের সরঞ্জাম ভাড়ার চুক্তি করেন পিএসপি মেরিন সার্ভিসেসের স্বত্বাধিকারী ক্যাপ্টেন কেএম হাফিজুর রহমান।

আদালতে

চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদী থেকে লোডিং করে পূর্ব কালুরঘাট, পশ্চিম কালুরঘাট, সিঅ্যান্ডবি, নতুন ব্রিজ, ১২ নম্বর, ভেল্লাপাড়া, পটিয়া সংলগ্ন জায়গায় বালি আনলোডিং করা হবে। এতে প্রাথমিকভাবে নতুন ব্রিজের জন্য দৈনিক ২৫ হাজার ঘনফুট বালি সরবরাহ করা হবে মর্মে প্রতি ঘনফুট বালির জন্য দুই টাকা ৩০ পয়সা ভাড়া মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যা প্রতি মাসে ১৭ লাখ টাকার বেশি।

চুক্তি অনুযায়ী, আট লাখ টাকা যন্ত্রাংশ মেরামত বাবদ পরবর্তী সময়ে খরচে সমন্বয় করা হবে। এরপর একই বছরের ৭ অক্টোবর এম ভি মরিয়ম নামে আরেকটি আনলোডিং ড্রেজার পাইপসহ ১ টাকা মূল্যে ভাড়া চুক্তি হয়। সর্বমোট ১২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ৪০ ফুটের ৯৮টি পাইপ তাঁকে দেওয়া হয়।

অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পিএসপি মেরিন সার্ভিসেসের এমবি আফিয়া ইবনাত ও এমবি বন্নি (১২ ইঞ্চি আনলোডিং এবং লোডিং ড্রেজার) এমবি ওয়াস্তাবির-২ ও এমবি নিলয় ফায়াজ নামে দুটি বাল্কহেড ড্রেজারসহ আনুসাঙ্গিক ইক্যুইপমেন্ট ভাড়ার চুক্তি করি পাপ্পীর সঙ্গে। এক মাস পর থেকে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তিনি চার মাস পর কাজ শুরু করেন। দুটি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে দৈনিক টাকা তুলে নিয়ে যেতেন। আমাদের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও তিনি কোনো পেমেন্ট আমাকে করেনি।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে আদালতে মামলার বাদীর নাক-মুখ ফাটিয়ে ভেঙে দিল দাঁত

তিনি বলেন, চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় গত ১০ মাসে আমার প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি ৬২ লাখ ২৪ হাজার ২৮০ টাকার ক্ষতি হয়। গত ৯ মে পাঁচটি ইকুইপমেন্টের মধ্যে তিনটি ফেরত চেয়ে নোটিশ পাঠাই। কিন্তু তিনি এর কোনো সদুত্তর দেননি। তাছাড়া ব্যাবসায়িক বৈঠকে বসলে পাপ্পী তার সহচরদের বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ গাড়িতে লোড কর।’ এসব বলে তিনি ভয় দেখানোর চেষ্টা করতেন।’

তিনি আরও বলেন, পাপ্পীর এমন কর্মকাণ্ডে ১৭ জুলাই বাকলিয়া থানায় জিডি করি। গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করি।

আরএস/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!