সূর্যমুখীর রাজ্যে—মৌমাছির ছুটোছুটি আর নানা রঙের পাখির মেলা

সবুজ মাঠে হলুদের মেলা। হলুদের আভায় চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা। হলুদের ফুলের ওপর মৌমাছি আর নানা রঙের পাখির আনাগোনা। নীল আকাশের সঙ্গে হলুদ ফুলের মায়াবি রূপ নাড়া দেবে যেকারো মন। এ যেন ‘সূর্যমুখীর রাজ্য‘।

বলছি হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সড়কের পাশেই নজরকাড়া সূর্যমুখী বাগানের কথা। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের নিজস্ব জমিতে চাষ করা সূর্যমুখীর বাগান এখন ফুলে ফুলে ভরা। অপরূপ এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের মানুষ এখানে ছুটে আসছেন । কেউ কেউ দৃষ্টিকাড়া ফুলের মাঠে ঢুকে তুলছেন সেলফি। ইতোমধ্যে সূর্যমুখী ফুলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে। এরপরই সেখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দর্শনার্থীর ভিড়।

আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন শত শত মানুষের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সূর্যমুখী গাছ ও ফুলের ক্ষতি হচ্ছে। হাটহাজারী উপজেলা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসছেন এখানে। তবে ছবি তুলতে গিয়ে অনেকেই গাছের ক্ষতি করছেন। এ অবস্থায় বাগানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বাগানের উপরের চারপাশে দেওয়া হয়েছে ঘেরা জালে।

মেলা

আরও পড়ুন: বাগেরহাটের সাধন—চাঁদপুরের রানী সবাই সীতাকুণ্ডে, শিবচতুর্দশী মেলা জমজমাট

রাউজান উপজেলা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা মো. শফি বলেন, ফেসবুকে ফুলের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে এখানে ছুটে এসেছি। দায়িত্বরতদের অনুমতি নিয়ে কিছু ছবিও তুললাম পরিবোরের সবাইকে নিয়ে। ভালোই লাগছে এখানে এসে। কাছাকাছি এমন দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ আর কোথাও নেই বললেই চলে।

আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রের কয়েকজন জানান, সূর্যমুখী একবর্ষী ফুলগাছ। লম্বায় ৩ মিটার ও ব্যাস ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। দেখতে সূর্যের মতো হওয়ায় এবং সুর্যের দিকে মুখ করে থাকায় এর নামকরণ সূর্যমুখী হয়েছে। এর বীজ হাঁস-মুরগীর খাদ্য ও তেলের উৎস হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। সমভূমি এলাকায় শীত ও বসন্তকালে চাষ করা হয় এটি। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাংগাইলসহ বিভিন্ন জেলায় এই ফুলের ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

আরও জানা যায়, সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল থেকে ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।

এবার তৃতীয়বারের মতো এক একর জমিতে হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বারি-৩ জাতের সূর্যমুখী চাষের আবাদ করেছে। এই জাতের প্রতি একর আবাদে ৫ কেজি বীজ লাগে।

আরও পড়ুন: নতুন সাজে সীতাকুণ্ড—সোমবার শুরু লাখো পুণ্যার্থীর শিবচতুর্দশী মেলা

১৭ বছর ধরে কাজ করা হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মচারী ও বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা আবদুল হান্নান বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হচ্ছে। ফুল চাষের মাধ্যম বীজ উৎপাদন করা হয় এবং বীজগুলো কৃষকদের সরবরাহ করা হয়। সূর্যমুখী ছাড়াও এখানে ভুট্টা, খৈ, টমেটো, বেগুন ইত্যাদির চাষ করা হয়। মূলত বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যেই এই চাষাবাদ।

তিনি আরও বলেন, এবারও এক একর জমিতে সুর্যমূখীর চাষ করা হয়েছে। মাঠ এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে। তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ। বাগানে এখন সব শ্রেণির মানুষ ছবি তোলার জন্য ভিড় করছে। ছুটির দিনে সবচেয়ে বেশি মানুষের ভিড় হয় এখানে। ভিড় সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া অনেকেই ছবি তুলতে গিয়ে গাছ ও ফুলের ক্ষতিসাধন করে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!