চট্টগ্রামে ‘নকল’ জিপসাম সার বানাচ্ছে দিনদুপুরেই, খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

ব্যবসার বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। খোলামেলা জায়গায় মাটি ও পাথর মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নকল জিপসাম সার! আবার এসব সার প্যাকেটে ভরে বড় বড় ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্যাকেট করার সময় ছড়িয়ে পড়া সারের গন্ধ ও কনা দূষিত করে তুলছে আশপাশের এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এমন অপকর্ম চললেও খবর নেই স্থানীয় প্রশাসনের।

নগরের পতেঙ্গা আবাসিক এলাকায় এভাবেই নকল সার প্যাকেট করে বাজারজাত করছে মেসার্স ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ নামের এক প্রতিষ্ঠান। হাদিপাড়া সড়কের পশ্চিম পাশে ২ নম্বর গলির মুখে ‘তারা মার্কা’ নকল জিপসাম সারের রমরমা বাণিজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

তবে প্রশাসন বলছে, ওমর ফারুক খোকনের নকল সার বাজারজাতের বিষয়টি তারা জানেন। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাদিপাড়া সড়কের পশ্চিম পাশে খোলা আকাশের নিচে কিছু শ্রমিক মেসার্স ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যাগে জিপসাম সার প্যাকেট করে ট্রাকে তুলছেন। বৃষ্টিতে ভেজা এই সারের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়। গন্ধের মাত্রা এতটাই তীব্র সেখানে দাঁড়িয়ে থাকায় মুশকিল।

অভিযোগ আছে, ওমর ফারুক খোকন ও তাঁর ভাই ওসমান গনি রিপন দুজনই নকল এ জিপসাম সার বাজারজাত করে আসছেন। খোলা জায়গায় মাটি ও পাথর মিশিয়ে সার প্যাকেট করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্যাকেট করার সময় সারের গন্ধ ও কনা বাতাসে উড়ে পুরো এলাকাকে দূষিত করে তুলছে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে আবাসিক ভবন থেকেই নকল প্রসাধনীর রমরমা বাণিজ্য

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকালয়ে জিপসাম সার প্যাকেটজাত করার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। বৃষ্টির মাধ্যমে জিপসাম ও নকল সার পানিতে মিশে আশপাশের জলাশয়ের মাছ মরে যাওয়াসহ ওই পানি ব্যবহারকারীদের শরীরে চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া চুলকানি, অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগও হতে পারে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজের রাসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. অজয় দত্ত আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জিপসাম সার হিউম্যান বডিতে বড় ধরনের ক্ষতি না করলেও তা কারও শরীরে প্রবেশ করলে চুলকানি, অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। তাছাড়া যেখানে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে ওই এলাকার মাটির লবণাক্ততা দেখা দিতে পারে। এছাড়া বৃষ্টির মাধ্যমে পানি আশপাশের জলাশয়ে প্রবেশ করলে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির মৃত্যু হতে পারে। তাই অনাবাসিক কোনো জায়গায় প্যাকেটজাত সবার জন্য নিরাপদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মেসার্স ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানের মালিক ওমর ফারুক খোকন ও তাঁর ভাই ওসমান গনি রিপন। তাদের মেসার্স রায়হান অ্যান্ড ব্রাদার্সসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে তারা দুভাই মূলত টিএসপি সারের সঙ্গে মাটি ও পাথর মিশিয়ে বাজারজাত করেন। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলাও রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে ১৫ জুলাই পতেঙ্গা টিএসপি গেইটের অদূরে হাদিপাড়া ওমর ফারুক খোকনের দুটি গোডাউনে অভিযান চালায় র‌্যাব। এসময় ৪শ টন নকল সার জব্দসহ খোকনের ভাই ওসমান গনি রিপনকে আটক করা হয়। তবে পালিয়ে যান মূলহোতা ওমর ফারুক খোকন। তখন সারের সঙ্গে মাটি ও পাথর মেশানোর প্রমাণ পাওয়ায় ওসমান গনি রিপনকে দুলাখ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তিন বছর আগে একই অপরাধে তাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওমর ফারুক খোকন আলেকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জিপসাম সার প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করছি। তবে আশপাশের কারো কোনো অভিযোগ নেই।

নকল সার তৈরির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনার যা ইচ্ছা করেন। আমার কিছু করার থাকলে করবো।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক নকল সার প্যাকেটজাতের স্থানটি কোথায় জানতে চান এবং ঠিকানা তাকে এসএমএস করে পাঠাতে বলেন। এরপর তিনি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।

যোগাযোগ করা হলে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ওমর ফারুক খোকনের নকল সার প্যাকেটজাত করার খবর শুনেছি। তবে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!