দানবীর—আড়ালে ‘ভেজাল’, বিএসপি ফুডের মালিক অজিতের জামিন মিলল অর্থদণ্ড—মুচলেকায়

দানবীর হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন তিনি। প্রভাবশালী এই মানুষটির নাম না ধরে সবাই ডাকেন ‘বাবু’। দানবীর সেই বাবুই আড়ালে করেন ‘ভেজাল বাণিজ্য’। দানবীর এই হিন্দু নেতার প্রতিষ্ঠানকে ভেজালের দায়ে বারবার জরিমানা করা হয়েছে। হয়েছে মামলাও। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সর্বশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন বিএসপি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দানবীর-হিন্দু নেতা অজিত কুমার দাশ।

বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী—৪, শরিফুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন অজিত কুমার দাশ। ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং মুচলেকায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেডের দাবি, তারা কখনো বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স ছাড়া কোনো পণ্য উৎপাদন কিংবা বিক্রি করেনি। বিএসপি ফুডকে পণ্য উৎপাদনের জন্য ২০১৯ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদে লাইসেন্স দেয় বিএসটিআই। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিএসপি ফুড ২০২১ সালের জুলাইয়ে পুনরায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ায়।

প্রতিষ্ঠানটি আরও দাবি করে, বিএসপি ফুড ভিনেগার উৎপাদনের জন্য বিএসটিআই থেকে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত লাইসেন্স নেয়। মান পরীক্ষার জন্য বিএসটিআইতে পাঠানোর জন্য তাদের উৎপাদিত ভিনেগার লেভেল জব্দ করে জরিমানা ও মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু বিএসপি ফুড প্রতিষ্ঠান ভিনেগার উৎপাদন ও বাজারজাত করেনি। তাছাড়া বিএসটিআই উৎপাদিত সিনথেটিক ভিনেগারও জব্দ করা হয়নি।

আরও পড়ন: দানবীরের আড়ালে ‘ভেজাল’—নেপথ্যের বাবু অজিত ‘হিন্দু নেতাও’

মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএসপি জানায়, সিনথেটিক ভিনেগার উৎপাদনের লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় বিএসটিআই আইনের বিধান অনুযায়ী লেভেল তৈরি করে বিএসটিআইয়ে জমা দেওয়ার আগে সিনথেটিক ভিনেগার উৎপাদন ও বাজারজাত করার অভিযোগে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আসামি আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জামিন আবেদন করলে আদালত ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।

বিএসপি কর্তৃপক্ষ এমন দাবি করলেও অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় বেশ বড় কারখানা রয়েছে বিএসপি ফুডের। ওই কারখানায় কুকমি ঘি ছাড়াও বানানো হচ্ছে কুকমি গার্লিক টোস্ট বিস্কুট, ডরিমন বিস্কুট, কুকমি স্পেশাল টোস্ট বিস্কুট, মিল্ক কোকোনাট বিস্কুট, বিএসপি টোস্ট, বিএসপি পটেটো ক্রেকার্স, বিএসপি ড্রাই কেক, সয়া সস্, হট টমেটো সস্, বিএসবি মিস্টার টুইস্ট, বিএসবি চিকেন চিপস, কমপ্লান, নাটি মিল্ক বিস্কুট, কোকমি হরলিক্স, বিএসপি পেনাট, বিএসপি চানাচুর, ভিনেগার, বিএসপি ঘি, চকলেটসহ হাজারো ভোগ্যপণ্য।

এসব ভোগ্যপণ্য তৈরি হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও বিষাক্ত কাঁচামালে। এছাড়া বিএসটিআইয়ের গুণগত মান পরীক্ষা না করেই পণ্যগুলো বাজারজাত করছে বিএসপি ফুড। এ কারণে তাদের একাধিকবার জরিমানাও গুণতে হয়েছে। একের পর এক জরিমানার পরও শোধরায়নি বিএসপি।

ভেজাল ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের কারণে ২০১২ সালে তাদের জরিমানা গুণতে হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ২০২০ সালে ২১ লাখ টাকা এবং একই বছরে আরেক অভিযানে জরিমানা করা হয় লাখ টাকা। ২০২২ সালের শুরুতেই দুটি মামলাসহ প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা গুণতে হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে হাত বাড়ালেই ‘ভেজাল খাদ্যপণ্য’, অভিযানেও কমছে না

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে কালুরঘাট বিসিক শিল্প নগরের বিএসপি ফুড কারখানা থেকে ভেজাল ঘি জব্দ করে র‌্যাব-৭। অভিযানে ৩ হাজার ৩৬০ কেজি ভেজাল ঘি, বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের বিষাক্ত ফ্লেভার, পাম ওয়েল, ডালডাসহ কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম নিজামকে আটক করা হয়।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিএসপি ফুডসের কারখানায় ভেজাল ও নিম্নমানের বিষাক্ত ফ্লেভার, পাম ওয়েল ও ডালডা মিশিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঘি তৈরি করা হচ্ছিল। বিক্রির জন্য রাখা এসব ঘিতে দুধের কোনো উপাদানই ব্যবহার করা হয়নি। গোপন সংবাদে সেখানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ঘি জব্দ এবং জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম নিজামকে আটক করা হয়।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!