দানবীরের আড়ালে ‘ভেজাল’—নেপথ্যের বাবু অজিত ‘হিন্দু নেতাও’

অজিত কুমার দাশ। সবাই যাঁকে সম্বোধন করেন ‘বাবু’ বলে। বিএসপি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। বাড়ি বাঁশখালী হলেও চট্টগ্রাম শহরেই গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। রয়েছে একাধিক বহুতল ভবন। ঘুরে বেড়ান বিলাসবহুল গাড়িতে।

লোকমুখে দানবীর হিসেবে পরিচিত পেতে ডোনেশনও করেন তিনি। অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেকে জড়ানোয় হিন্দু নেতা হিসেবেও তাঁর বেশ পরিচিতি আছে। কিন্তু দানবীরের আড়ালেই এই হিন্দু নেতা চালাচ্ছেন ভেজাল ঘি’র রমরমা বাণিজ্য। একের পর এক বিএসপি ফুডে ভেজাল ধরা পড়লেও প্রতিবারই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান বিএসপি ফুডের মালিক অজিত দাশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরেই অজিত দাশের রয়েছে একাধিক বহুতল ভবন। খাতুনগঞ্জের চাক্তাইয়ে একটি বাণিজ্যিক ভবন ছাড়াও চেরাগীপাহাড়, জামালখান এবং বেটারিগলিতেও রয়েছে আবাসিক ভবন।

ব্যবসায়িক থেকে ধর্মীয়— অসংখ্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অজিত দাশ। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন-চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি, বিসিএসআইআর বাংলাদেশ লিজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হিন্দু মহাজোটের প্রধান পরামর্শক।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে হাত বাড়ালেই ভেজাল খাদ্যপণ্য, অভিযানেও কমছে না

এছাড়া একই পদে (প্রধান পরামর্শক) আরও চারটি সংগঠনে রয়েছে তাঁর নাম। সংগঠনগুলো হলো— চট্টগ্রাম সায়েন্স ফাউন্ডেশন, চিটাগাং কণ্ঠ, এনভায়রনমেন্ট ফোরাম, বিজয় বাংলাদেশ। ডুলেন্স প্রাক্তন সৈনিক কল্যাণ সমিতি (দেসওয়া) ট্রাস্টে ‘প্রধান’ শব্দটি বাদ দিয়ে যুক্ত হন পরামর্শক পদে।

এছাড়া অজিত কুমার দাশের নাম রয়েছে কালুরঘাট বিসিক মালিক সমিতিতে। এই সমিতিতে তাঁর পদ জয়েন সেক্রেটারি। সদস্য পদ রয়েছে ইউনেস্কো ক্লাব, সমাজসেবা অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম সিনিয়রস ক্লাব লিমিটেড, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম হাসপাতাল (রোগী কল্যাণ পরিবেশ), চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালী মন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম পরিচালনা পরিষদে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ সহসম্পাদক পদেও রয়েছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় বড়সড় কারখানা রয়েছে বিএসপি ফুড প্রোডাক্টের। ওই কারখানায় কুকমি ঘি ছাড়াও বানানো হচ্ছে কুকমি গার্লিক টোস্ট বিস্কুট, ডরিমন বিস্কুট, কুকমি স্পেশাল টোস্ট বিস্কুট, মিল্ক কোকোনাট বিস্কুট, বিএসপি টোস্ট, বিএসপি পটেটো ক্রেকার্স, বিএসপি ড্রাই কেক, সয়া সস্, হট টমেটো সস্, বিএসবি মিস্টার টুইস্ট, বিএসবি চিকেন চিপস, কমপ্লান, নাটি মিল্ক বিস্কুট, কোকমি হরলিক্স, বিএসপি পেনাট, বিএসপি চানাচুর, ভিনেগার, বিএসপি ঘি, চকলেটসহ হাজারো ভোগ্যপণ্য।

ভেজাল

দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিষাক্ত কাঁচামালে ভেজাল ভোগ্যপণ্য উৎপাদন এবং বিএসটিআইয়ের গুণগতমান পরীক্ষা না করে পণ্য বাজারজাত করছে বিএসপি ফুড। এ কারণে তাদের জরিমানাও গুণতে হয়েছে বহুবার।

এরমধ্যে ২০১২ সালে তাদের জরিমানা গুণতে হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ২০২০ সালে ২১ লাখ টাকা, একই বছরে আরেক অভিযানে আরও ১ লাখ টাকা।

২০২২ সালের শুরুতে দুটি মামলাসহ গুণতে হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা। বিএসপি ফুডস প্রোডাক্টস কোম্পানি একের পর এক জরিমানা গোনার পরও নিজেদের বদলাতে পারেনি।

আরও পড়ুন : ‘হিন্দুদের—লড়াই’ প্রবর্তক সংঘের ২ নেতার বিরুদ্ধে মামলা ইসকনের

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস কারখানা থেকে আবারও ভেজাল ঘি জব্দ করা হয়।অভিযানে ৩ হাজার ৩৬০ কেজি ভেজাল ঘি’র পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের বিষাক্ত ফ্লেভার, পাম ওয়েল, ডালডা উদ্ধারসহ কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম নিজামকে আটক করা হয়।

নগরের চান্দগাঁও থানাধীন কালুরঘাট বিসিক শিল্প নগরীর বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসে এ অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব ৭।

র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চান্দগাঁওয়ের বিএসপি ফুডস প্রোডাক্টস প্রতিষ্ঠানের ভেতর ভেজাল ও নিম্নমানের বিষাক্ত ফ্লেভার, পাম ওয়েল ও ডালডা মিশিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঘি তৈরি করা হয়। বিক্রির জন্য রাখা এ ঘি’তে দুধের কোনো উপাদানই নেই। গোপনে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ঘি জব্দ করা হয়েছে।

আটক আমিনুল ইসলাম নিজামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তাঁকে চান্দগাঁও থানায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বিএসপি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত কুমার দাশের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন আলোকিত চট্টগ্রাম প্রতিবেদক। কিন্তু রিপোর্টার পরিচয় দিতেই ‘এখন ব্যস্ত আছি’ বলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিছিন্ন করে দেন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!