জীবিত ব্যক্তি হয়ে গেলেন ‘মৃত’, নেপথ্যে সম্পদ আত্মসাৎ

রাউজানে সম্পদ আত্মসাৎ করতে জীবিত এক ব্যক্তিকে বানানো হয়েছে মৃত! এরপর ওই ব্যক্তির সম্পদের নামজারিও করে ফেলা হয়েছে।

কদলপুর ইউনিয়নের বৃদ্ধ আবদুল বারেকের (৭৭) সঙ্গে এমন প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। তাই ভূমি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সময় কাটছে বৃদ্ধ বারেকের।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) কনকনে শীতের সকালেও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আদালতে আসেন বারেক। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে সহকারী কমিশনার রিদুয়ানুল ইসলামকে তিনি বিষয়টি জানান।

আরও পড়ুন : সম্পদের লোভে ছোট বোনকে মেরে ফেলতে চাইছে বড় বোন

পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮ নম্বর কদলপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছড়ার পাড় আবদুল হামিদের নতুন বাড়ির বাসিন্দা মৃত আহম্মদ উল্লাহর ছেলে আবদুল বারেক। তাঁর স্ত্রী নুর নাহার বেগম, দুমেয়ে ফরিদা বেগম ও রুবি আকতার এবং দুছেলে মো. শফি ও সাইফুল ইসলাম । দুমেয়ের মধ্যে ফরিদাকে মোহাম্মদপুর বানুহাজীর বাড়ির ইলিয়াছের সঙ্গে বিয়ে দেন। পরে ফরিদার স্বামী মারা যান।

এছাড়া অপর মেয়ে রুবি আকতারকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢালার মুখ এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগরের ছেলে বাদশা মিয়াকে বিয়ে দেন। পরে রুবির স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দুমেয়ে এখনও স্বামীর বাড়িতেই আছেন।

আবদুল বারেকের দুছেলে শফি ও সাইফুল মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। তিনি ৭ নম্বর পূর্ব রাউজান লম্বরইয্যার বাড়ির পাশে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করে দুছেলের পরিবারকে নিয়ে বসবাস করছেন। এছাড়া কদলপুর ইউয়িনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছড়ার পাড় আবদুল হামিদের নতুন বাড়িতে আবদুল বারেকের কেনা সম্পত্তিতেও বাড়ি রয়েছে।

এদিকে তাঁর ভাই মৃত আবদুল কাদেরের স্বজনরা বারেক বিবাহ করেননি, তাঁর কোনো সন্তান নেই এবং তিনি মারা গেছেন বলে ভুয়া ওয়ারিশান সনদ নেন। এরপর ভুয়া দলিল তৈরি করে আবদুল বারেকের সম্পত্তির নামজারিও করে ফেলেন! এ ঘটনায় নামজারি মামলা (১৭৬২/২১-২২) হয়েছে।

ভুক্তভোগী বৃদ্ধ আবদুল বারেক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমার সম্পত্তির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে ভূমি অফিসে গেলে আমার কাছ থেকে কর নেওয়া হয়নি। জানতে পারি আমার ভাই আবদুল কাদেরের স্বজনরা তাদের নামে আমার সম্পত্তির নামজারি করে ফেলেছে। বিষয়টি জেনে ভুয়া নামজারি বাতিলের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আদালতে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে কনকনে শীতের মধ্যে এসে দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদুয়ানুল ইসলামকে বিষয়টি আবারও অবহিত করি। এসময় তিনি নাজির ছুটি থেকে ফিরলে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

আরও পড়ুন : জমি দখল থেকে অর্থ আত্মসাৎ—চেয়ারম্যান কাজলের সর্বাঙ্গে দাগ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঊনসত্তরপাড়া ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকতা মৃদুল ভট্টাচার্য্য বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রদত্ত ওয়ারিশান ও মৃত্যু সনদ দিয়ে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত সাজিয়ে নামজারি হলে সেটি বাতিল করার নিয়ম রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারমান নিজাম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমার সময় এ ধরনের ওয়ারিশান সনদ দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদুয়ানুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বৃদ্ধ আবদুল বারেকের করা আবেদন পেয়েছি। সেটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!