জমি দখল থেকে অর্থ আত্মসাৎ—চেয়ারম্যান কাজলের সর্বাঙ্গে দাগ

বোয়ালখালী আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল দে। সনদ জালিয়াতি, জমি দখল থেকে অর্থ আত্মসাৎ— সব অভিযোগই আছে তাঁর বিরুদ্ধে। সর্বশেষ আজ বুধবারও (৩ নভেম্বর) চেয়ারম্যান কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ইউপি সদস্যের স্ত্রী।

জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মো. দেলোয়ার হোসেন তার জমি জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মাসাৎ করায় বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন চেয়ারম্যান কাজলের বিরুদ্ধে ।

এর আগে গত ১০ জুলাই চেয়ারম্যানের অপকর্মের কাহিনী তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ জমা দেন মো. জামাল, নারায়ণ সেন ও মো. আব্বাস। সর্বশেষ ৩ নভেম্বর (বুধবার) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মৃত ইউপি সদস্যের স্ত্রী আসমা বেগম।

আরও পড়ুন: ‘অনন্য রেকর্ড’— রাউজানে ভোটের আগেই সবাই জয়ী

পাহাড় থেকে কাঠ সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করেন আমুচিয়া ইউনিয়নের কাঠুরিয়া দেলোয়ার হোসেন। স্ত্রী-সন্তান মিলে ৬ জনের টানা পোড়েনের সংসার এ কাঠুরিয়ার।

দেলোয়ার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ২০০৫ সালে অনেক কষ্টে জমানো টাকা ও ধার করে সাড়ে ৮ শতাংশ জমি কিনেছিলাম। কিন্তু এ জমি কেনার পর থেকেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজল দে আমাকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে চলেছেন। ২০০৮ সালে জালিয়াতি করে চেয়ারম্যান নিজের নামে জায়গাটির নামজারী করেন।

এদিকে সম্মানী ভাতা না দেওয়ায় কাজল দে’র বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন আমুচিয়া ইউনিয়নের চার ইউপি সদস্য। ইউপি সদস্য মাহাবুব আলম, আবু জাফর, মোছলেম উদ্দিন ও আরেফা বেগমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশকে।

আরও পড়ুন: বিরোধিতাকারীরা মসজিদ-কবরস্থানে জায়গা পাবে না—চেয়ারম্যান প্রার্থীর ঘোষণা

জানতে চাইলে ডা. সেতু ভূষণ দাশ বলেন, আগামী রোববার এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তদন্তনাধীন বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না।

অপরদিকে ভুক্তভোগী মো. জামাল অভিযোগ করেন, কাজল দে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই টাকার বিনিময়ে ওয়ারিশান জালিয়াতি করছেন। নিজে জায়গা-জমি দখলের পাশাপাশি একজনের জমি অন্যজনকে দখল করে দিয়ে খতিয়ান সৃষ্টি করেছেন। এমনকি নিজের তিন ভাইকে বাদ দিয়ে নিজের নামে ওয়ারিশান সনদ দিয়ে খতিয়ান সৃজন করে ভাইদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন। তার এ ধরণের অপকর্মের শিকার হয়েছেন এলাকার অনেকেই।

দীর্ঘ চার বছর ধরে পরিষদের সম্মানী ভাতা না পাওয়ায় অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যান ক্যান্সার আক্রান্ত ইউপি সদস্য আবুল হাসেম বাদশা। তার স্ত্রী আসমা বেগম ৩ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৃত স্বামীর প্রাপ্য টাকা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

আসমা বেগম বলেন, আমার স্বামী আবুল হাসেম বাদশা ইউপি সদস্যের দায়িত্বরত অবস্থায় ২০২০ সালের ১১ জুলাই মারা যান। তিনি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর সম্মানী ভাতার জন্য অনেক আকুতি-মিনতি করলেও চেয়ারম্যানের মন গলেনি। তিনি ঠিক সময়ে সম্মানী ভাতা না দেওয়ায় অনেকটা বিনা চিকিৎসায় আমার স্বামী মারা যান। মৃত্যুর পরও তিনি ভাতা দিচ্ছেন না।

আরও পড়ুন: বিরোধিতাকারীরা মসজিদ-কবরস্থানে জায়গা পাবে না—চেয়ারম্যান প্রার্থীর ঘোষণা

ইউপি সদস্য আরেফা বেগম, মাহবুব আলম, আবু জাফর তালুকদার ও মোছলেম উদ্দিন জানান, পরিষদের আয় থাকার পরও দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সম্মানি ভাতা দেওয়া হচ্ছে না ইউপি সদস্যদের। চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ইউপি তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান কাজল দে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে আমাকে ঘায়েল করতে এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

মাসুদ/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!