চোখের জলে দেবী দুর্গার বিদায়, বৃষ্টিতেও চট্টগ্রামে সাগরপাড়ে জনস্রোত

উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা। আজ (মঙ্গলবার) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে বিদায় দেওয়া হয় মহিষমর্দিনী, দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে।

এবার দেবী ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে ফিরে গিলেন কৈলাসে। সঙ্গে ছিল সিদ্ধিদাতা গণেশ, বল-বলবীর্য ও পৌরুষের কার্তিক, ধন ও ঐশ্বর্যের প্রতীক লক্ষ্মী এবং জ্ঞানের প্রতীক দেবী সরস্বতী।

গত ২১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে ঘোটকে চড়ে এই মর্ত্যধামে ভক্তদের মাঝে এসেছিলেন দেবী দুর্গা। এরপর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও আজ বিজয়া দশমীতে শেষ হলো পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে পুজোর বাঁধভাঙা আনন্দে বাধা হতে পারেনি বৃষ্টি, মণ্ডপে বিদায়ের সুর

প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবরমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে দুর্গোৎসবের প্রতিটি দিন । আজ সকাল থেকে পূজা মণ্ডপগুলোতে বিদায়লগ্নের বিষণ্ণতা থাকলেও আনন্দেরও কমতি ছিল না। সকাল থেকেই প্রতিটি মণ্ডপে ছিল বিদায়ের প্রস্তুতি।

আজ সকালে দশমী পূজা শেষে ভক্তদের দেওয়া হয় পুষ্পাঞ্জলি। এসময় দেবী দুর্গাকে প্রণাম জানিয়ে পৃথিবীর সকল অশুভ শক্তির বিনাশ কামনা করেন ভক্তরা।

দশমীর পূজা ও অঞ্জলি শেষে বিবাহিত নারীরা দুর্গার দেবীর কপালে দেন সিঁদুর, মুখে দেন পান-মিষ্টি এবং চুলে তেল। স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা ১০৮ বার শ্রীশ্রী দুর্গা লেখা চিরকুট গুজে দেন দেবীর হাতে। এরপর মহিলারা একে অন্যকে তেল-সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে মিষ্টিমুখ করান। এছাড়া পূজামণ্ডপগুলোতে সেলফি তোলার আনন্দে মেতে উঠে নানা বয়সী মানুষ।

দশমীকে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে নগরী ছিল উৎসবমুখর। আজ ছিল সরকারি ছুটিও। তাই ছুটির দিনে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বিসর্জন দেখতে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মানুষের ঢল নামে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও কর্ণফুলীর তীরে। দুপুর হতেই বাড়তে থাকে লোক সমাগম। পতেঙ্গা সৈকত ও কর্ণফুলী ছাড়াও পারকি, কাট্টলী ও অভয়মিত্র ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের আয়োজন করা হয়।

এদিকে প্রতিমা নিরঞ্জন নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর ও সিটি করপোরেশন যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে পতেঙ্গা সৈকতে। ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

দুপুর থেকে ঢোলের বাদ্য, জয় মা দুর্গা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পতেঙ্গা সৈকত এলাকা। প্রতিমা নিরঞ্জন উপলক্ষে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় নানা কর্মসূচির আয়োজন করে পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে পুজোয় গভীর রাতেও দর্শনার্থীর ঢল

যোগাযোগ করা হলে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বৃষ্টির কারণে একটু কষ্ট হলেও উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন চলছে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কর্ণফুলী অভয়মিত্র ঘাট, কালুরঘাট ও কাট্টলী সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। প্রতিমা নিয়ে ট্রাক আসা মাত্রই আমরা দ্রুত বিসর্জনের ব্যবস্থা করছি। যাতে তাড়তাড়ি শেষ করা যায়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের হিসাব অনুযায়ী এবার নগরে ২৯৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!