‘চুরি পেশায়’—এক মায়ের ৩ ছেলে, ৫ বছরে ৪০০ চুরি

ওরা এক মায়ের তিন সন্তান। একজন রিকশাচালক, অন্য দুজন সেই রিকশার যাত্রী! এভাবেই তারা রাতের বেলায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান একসঙ্গে।

রিকশা থেকেই টার্গেট করা হয় অন্ধকার বাসা। টার্গেট করা বাসার পেছন দিকে গিয়ে পাইপ বেয়ে উঠেন একজন। জানালার গ্রিল বাঁকা করে প্রবেশ করেন বাসায়। এ সময় নিচে পাহাড়ায় থাকেন দু’জন। এরপর ঘরের সব মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে হাওয়া হয়ে যান।

৫ বছরে এই তিন ভাই চুরি করেছেন অন্তত ৪০০টি। আর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ বার। নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার তাদের চুরির মূল টার্গেট। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা কেউ মোবাইল বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস চুরি করেন না। এরপরও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।

আরও পড়ুন: ‘নবজাতক চুরি’ চট্টগ্রাম মেডিকেলে, নানিসহ ৩ চোরকে ধরল পুলিশ

পেশাদার চোরচক্রের ৪ জনকে আটক করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক হয়। চুরির মালামাল হেফাজতে রাখায় এক ভাইয়ের স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, ডলার, ১৫টি হীরার আংটি, ৪ জোড়া হীরার কানের দুল, ২টি হীরার বেসলেট ও ১টি হীরার শাড়ির ক্লিপ।

আটকরা হলেন- মো. মঈনুদ্দিন প্রকাশ মনির (৩২), মোছাম্মৎ নয়নতারা আক্তার (২১), মো. রহিম (৩০) ও মো. জাহাঙ্গীর (৩০)। চোরচক্রের তিন ভাই হলো- ইব্রাহিম খলিল (২৭), মো. মঈনউদ্দিন (৩২) ও মো. রহিম (৩০)।

এদের মধ্যে মঈনুদ্দীন ও রহিমকে রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। ইব্রাহিম আগেই গ্রেপ্তার হন। রোববার মঈনুদ্দীনের স্ত্রী নয়ন তারা এবং মো. জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, আটকরা পেশাদার চোরচক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা নগরের বিভিন্ন বাসাবাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল চুরি করেন। চোরদের মধ্যে আপন তিন ভাইও আছে। তারা রাতের বেলায় রিকশা নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে খালি বাসাকে টার্গেট করে চুরি করে। এদের মধ্যে মঈনুদ্দিন চুরি করেন, আর রহিম ও জাহাঙ্গীর থাকেন পাহাড়ায়।

আরও পড়ুন: পুলিশি অভিযানে হার্ডওয়্যারের চোরাই পণ্য, আটকাল ৫ চোর

পুলিশ আরও জানায়, জাহাঙ্গীর এর আগেও ছিনতাই মামলায় ৮ বছর সাজা ভোগ করে কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হন। বের হয়ে ছিনতাই ছেড়ে চুরির পেশায় জড়ান।

কোতোয়ালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নেজাম উদ্দীন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চোর মঈনুদ্দীন অত্যন্ত শক্তিশালী। মূলত কারাগারে রান্না করতে গিয়ে তার হাত ও পায়ের পেশীগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠে। জামিনে বের হয়ে জিমও করেছে। শারীরিক এই শক্তিকে সে লাগাচ্ছে চুরির কাজে। হাত ও পায়ের সাহায্যে বাসার যেকোনো বাসাবাড়ির জানালার গ্রিল অনায়াসে বাঁকা করে ফেলতে পারে সে। প্রথমে টার্গেট করা বাসার পেছনে গিয়ে পাইপ বেয়ে উপরে উঠে। এরপর জানালার গ্রিল বাঁকা করে ঢুকে পড়ে ঘরে । একপর্যায়ে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিচে নেমে পড়ে। এ সময় রহিম এবং জাহাঙ্গীর থাকে পাহারায়।

ওসি আরও বলেন, মঈনুদ্দীন চুরির অপরাধে ২ বার, ছিনতাই ও নারী নির্যাতনের অপরাধে ২ বারসহ মোট ৪ বার গ্রেপ্তার হয়। এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অপরাধে রহিমকে একবার গ্রেপ্তার করে চকবাজার থানা পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক আরও দুটি মামলা রয়েছে।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!