চট্টগ্রামে ‘ভয়াবহ’ হচ্ছে ডেঙ্গু, সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের রেকর্ড

এডিস মশার প্রজনন মৌসুম শেষ হলেও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর তাণ্ডব থামছেই না। গেল সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭৬৯ জন। এর আগে আগস্টে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৯৭ জন এবং জুলাইয়ে ১ হাজার ৬৮৮। গত ৯ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে আগস্টে, ২৮ জনের। এর আগে সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের এবং জুলাইয়ে ১৬ জনের।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রজনন মৌসুম। এখন চলছে শরৎকাল। প্রজনন মৌসুম শেষ হলেও কমেনি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার প্রজনন বাড়ায় রোগীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৬৭৯ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ‘শক সিনড্রোমে’। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭৫ জন। এর মধ্যে গত দুমাসেই মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের৷ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। তবে মৃত্যু বেশি নারী ও শিশু। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২৩ পুরুষ, ২৬ নারী ও ২৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট পুরুষের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৯০ জন, নারী ২ হাজার ৭০৬ জন ও শিশু ২ হাজার ৬০৬ জন।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু, মৃত্যু বেশি নারী-শিশুর

নগরের পাশাপাশি উপজেলায়ও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সংখ্যা। সীতাকুণ্ড উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলায় মোট আক্রান্ত ১ হাজার ২৯ জন। এরপরে রয়েছে পটিয়া উপজেলা। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩২৭ জন। ১৫ উপজেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৯৪০ জন।

এদিকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এক কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি মশার ওষুধ ছিটানোর দাবি করলেও বাস্তবে এর সুফল আসেনি। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ক্রাশ প্রোগ্রাম, লার্ভা ধ্বংস করতে ড্রোন উড়ানোর পাশাপাশি নানা কর্মযজ্ঞ হাতে নিলেও হাসপাতালে প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছেই৷ একইসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামে সিভিল সার্জনের জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এখন বৃষ্টির মৌসুম না। এরপরও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে৷ এ কারণেই এডিস মশার বিস্তার বাড়ছে৷ এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে এই বৃষ্টিতে এডিস মশা ২১ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

তিনি বলেন, গত বছর এত মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়নি। এবার সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সর্বাধিক। আবহাওয়াজনিত কারণেই মূলত এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চলতি অক্টোবরেও ডেঙ্গুর তাণ্ডব থাকবে। সামনের মাসে শীত আসবে। তখন হয়ত ধীরে ধীরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে পারে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করানো প্রয়োজন। এডিস মশার প্রজনন মৌসুম না থাকলেও অনিয়মিত বৃষ্টির কারণে মশার উপদ্রব রয়েছে। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এজন্য সকলের সচেতনতা প্রয়োজন।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!