চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের দুয়ার খুলছে ২৮ অক্টোবর, প্রধানমন্ত্রীর হাতেই উদ্বোধন

খরচ ১০ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা

চট্টগ্রামে দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ অক্টোবর। চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের এই টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করা হবে টানেল।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিব মো. মনজুর হোসেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্বের নয়, জাতির জন্যও অনেক গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় টানেল এখন প্রায় প্রস্তুত। ইতিমধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। টানেলের প্রি-কমিশনিং থেকে শুরু করে নিরাপত্তার সব বিষয় দেখা হয়েছে। আশা করছি ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের পরদিন সাধারণ মানুষ টানেলে যাতায়াত করতে পারবে।

সচিব বলেন, টানেল উদ্বোধনের পরও আমাদের কার্যক্রম চলবে। পুলিশ ফাঁড়ি, ডাম্পিং, স্টেশনের কথা বলা হয়েছে সেটা আমরা করতে পারব। সেই জায়গাও রয়েছে। অপারেশনে যারা রয়েছে, মেইটেনেন্স যারা করবে তাদের নিজস্ব ভেহিক্যাল থাকবে। প্রথমদিকে আমরা চেষ্টা করব সবার সমন্বয়ে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার।

টানেল চালু হলে ট্রাফিক জট হতে পারে কি-না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাফিকের যেমন এই বিষয়ে প্ল্যান আছে, পুলিশেরও নির্দিষ্ট প্ল্যান থাকতে পারে। সিডিএর পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব আছে। তারাও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। টানেলের যে আরও একটি বড় লক্ষ্য আছে সেটা হলো, কক্সবাজারে কিছু বড় প্রকল্প হচ্ছে। ভবিষ্যতে আগামী দুই-চার বছরের মধ্যে সেই প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য টানেলটি ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পুলিশের আলাদা প্ল্যান ও পরিকল্পনা আছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সব কাজ করতে চাই।

আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু টানেলে বদলে গেছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, চোখের পলকেই চৌমুহনী

ওয়ান সিটি টু টাউনের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, যদিও সরকারের একটি প্রকল্প এই টানেল। সেতু বিভাগেরও লক্ষ্য ছিল টানেলটি তৈরি করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ওয়ান সিটি টু টাউন। পতেঙ্গার এক পাশে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও করা হচ্ছে। আনোয়ারা প্রান্তে পৌনে দুবছর ধরে যা দেখছি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চোখের সামনে সেই পরিবর্তন দেখা যায়।

তিনি বলেন, নগরীকে যদি আনোয়ারার ওই প্রান্তে শিফট করা যায় তাহলে এদিকে চাপ কমবে। ব্যবসা, শিল্প কারখানা গড়ে উঠা এগুলোই তো মূল লক্ষ্য। একটি দেশের উন্নয়নে জিডিপিতে পজেটিভ প্রভাব যেটা থাকে সেটা হচ্ছে আমরা সময় বাঁচাতে পারছি কিনা, শিল্প উন্নয়ন ঘটাতে পারছি কিনা, ট্যুরিজমে উন্নয়ন ঘটাতে পারছি কিনা। সবকিছু মিলিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে সেই উন্নয়নটা দেখা যাচ্ছে। ওয়ান সিটি টু টাউনের কনসেপ্টটা সেখান থেকেই এসেছে।

তিন চাকার গাড়ি চলাচলের বিষয়ে মনজুর হোসেন বলেন, কোন কোন যানবাহন চলবে টানেলে সেটা নির্ধারণ এবং টোলও ধার্য হয়ে গেছে। টানেলে ৮০ কিলোমিটার বেগে প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চলতে পারবে। টানেলের কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন হওয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জও আছে।

তিনি আরও বলেন, ভেতরে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য রেসকিউ কিভাবে হবে সেটা অন্য ব্রিজ বা সড়ক থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে এই জিনিসটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে। সেই ধারণা থেকে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটা নিরাপদ হবে না বলে আমি মনে করি।

দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ট্যাক্সি ক্যাব চালুর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্যাক্সি ক্যাব যেকেউ চালু করতে পারে। সেজন্য সেতু বিভাগ থেকে আলাদাভাবে প্রকল্প নেওয়ার দরকার নেই। জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিতে পারে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। টানেলে কয়েক মাস ধরে ট্রায়াল হচ্ছে। ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল কাজ হয়ে যাওয়ার পর প্রি কমিশনিং, সেইফটি এসব ট্রায়ালের অংশ।

ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের টানেলের কাজ সমাপ্তি করার কথা থাকলেও তার আগেই আমরা কাজ শেষ করেছি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এখানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। দিনশেষে আমরা সবাই কাজ করছি দেশের জন্য, জাতির জন্য। সবাই মিলে কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না। এখানে একটি মজার বিষয় হচ্ছে টানেলে ঢুকার আগে যেসব গাড়ি এফএম রেডিও চালু করবে তখন টানেল ব্যবহারের নীতিমালা অটোমেটিক চলতে থাকবে। অধিকাংশ রেডিও স্টেশনে এই নীতিমালা রয়েছে। টানেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেডিওতে এই নীতিমালাগুলো পড়ে শোনানো হবে।

তিনি আরও বলেন, ২৯ অক্টোবরের আগে টানেলে সাধারণ মানুষ কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টার পর টানেল সাধারণ মানুষের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। জরুরি গাড়ি ও প্রশাসনের অন-ডিউটিরত গাড়িকে টোলের আওতায় আনা হবে না। আর সবাইকে টোল দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও টোল দেন। যেসব জায়গায় যেতে উনাকে সেতু ব্যবহার করতে হয়েছে সব জায়গায় উনাকে পুরো গাড়ির বহরের জন্য টোল দিতে হয়েছে।

সভায় বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান, নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, টানেলর প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ ও আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর বঙ্গবন্ধু টানেল কর্ণফুলী নদীর দুতীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই টানেলের মধ্যদিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। এটি বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

শুরুতেই এই প্রকল্পের নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬.৬৩ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪.৪২ কোটি টাকা। এরপর আবারও বাড়ানো হয় ব্যয়। বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ ব্যয় বাড়ায় প্রকল্পের খরচ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯.৭১ কোটি টাকা।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!