বঙ্গবন্ধু টানেলে বদলে গেছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, চোখের পলকেই চৌমুহনী

বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জনজীবনে পরিবর্তন এসেছে। এখন আগের চেয়ে কম সময়ে আনোয়ারার মানুষেরা চট্টগ্রাম শহরে যেতে পারছে। এক সময় আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী থেকে চট্টগ্রাম শহরে যেতে ২ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন সেই পথ পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০-১৫ মিনিটেই। এতে সময়ের সঙ্গে ভোগান্তি কমেছে এ জনপদের মানুষের।

এছাড়া রাস্তার দুপাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ভবন ও শিল্প কারখানা। যা কয়েক বছর আগেও কেউ কল্পনা করেনি। টানেল সংযোগ সড়ককে ঘিরে পাল্টে যাচ্ছে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর অর্থনৈতিক ও যোগাযোগের চিত্রও। ব্যাপক হারে চলছে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ, স্থাপন হচ্ছে কল-কারখানা। বাড়ছে ব্যাংক-বীমাসহ নানা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। হু হু করে বাড়ছে ছয় লেন সংযোগ সড়কের দুপাশের জমির দামও।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেন সংযোগ সড়কের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। দৃষ্টিনন্দন ছয় লেন সড়কে ইতোমধ্যে যান চলাচলের দৃশ্য উপভোগ করছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীরা। যানজট ছাড়াই সড়কে চলছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। শাহ আমানত সেতু থেকে আনোয়ারায় পৌঁছাতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। সড়ক নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হলে সময় আরো কমে আসবে। বিগত কয়েক বছর আগেও সময় লেগেছিল প্রায় দুঘণ্টা। আর দিনের অর্ধেক সময়েই থাকত যানজট।

সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং থেকে আনোয়ারার কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত ছয় লেন সড়কের চার লেনের কাজ শেষের পথে। ইতোমধ্যে ক্রসিং থেকে ফকিরনীর হাট এক কিলোমিটার, শাহমীরপুর থেকে ফাজিল খাঁর হাট দুই কিলোমিটার, ফাজিল খাঁর হাটের পর থেকে বড়উঠান পর্যন্ত এক কিলোমিটার এবং চাতরী চৌমুহনী বাজারের পর থেকে কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারসহ মোট ৫ কিলোমিটার চার লেন সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।

এছাড়া টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে গত ২-৩ বছরে প্রায় বদলে গেছে এলাকার চিত্র। যেখানে দোতলা ভবনও ছিল না সেই কালাবিবির দীঘি এলাকায় এক বছরে নির্মিত হয়েছে অন্তত ২০টি বাণিজ্যিক ও আবাসিক বহুতল ভবন। এখানকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি কিনেছে দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ, ফোরএইচ গ্রুপ, ডায়মন্ড সিমেন্ট, এস আলম গ্রুপ ও পারটেক্স। সেই সঙ্গে জমির দাম ও ভবনের ভাড়া বেড়ে গেছে ১০ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত।

টানেল সংযোগ সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও চলাচল নির্বিঘ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে সড়কটি। বর্তমানে সৌন্দর্যবর্ধন ও নিরাপত্তামূলক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ছয় লেন সড়কের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ।

আরও পড়ুন: হ্যাকার চক্রের বড় জাল দেশজুড়ে, কাউন্টার টেরোরিজমের জালে ৩ হ্যাকার

তিনি বলেন, তিনটি গোলচত্বর বানানোর কাজ চলছে। চাতরী চৌমুহনীর কাছে টানেলের মূল সড়ক ও সংযোগ সড়কের মিলনস্থল, কালা বিবির দীঘি মোড় এবং শিকলবাহা ওয়াই জংশনে এই তিনটি গোলচত্বর বানানো হচ্ছে। সবগুলো চত্বরই হবে প্রায় ১০০ ফুটের। এতে গাড়িগুলো সহজেই টার্ন নিতে পারবে। যানজট বা দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কম থাকবে।

বাঁশখালীর মোস্তাফিজ অডিওর মালিক মোস্তাফিজ বলেন, কয়েক বছর আগেও একটা দিন চলে যেত শুধু বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রাম শহরে যাওয়া-আসা করতে। এখন আনোয়ারার সীমানায় প্রবেশ করলেই সেখান থেকে যেতে লাগে মাত্র ১০-১৫ মিনিট। টানেলের সুফল ওই এলাকার মানুষ পেতে শুরু করেছেন।

টানেল সংযোগ সড়কের পাশে দক্ষিণ বন্দর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাসকারী কৃষি কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন বলেন, আমাদের বাসা ভাড়া আগে সাড়ে চার হাজার টাকা ছিল, এখন তা প্রায় সাত হাজার টাকা। কলকারখানা বাড়ার কারণে বেড়েছে ভাড়াটিয়ার সংখ্যা।

কালাবিবির দিঘি মোড় এলাকায় ব্যবসায়ী পেয়ারু বলেন, টানেলের কারণে এলাকায় ব্যবসার পরিসর বাড়ছে। চাতরী চৌমুহনী বাজারের চেয়ে এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে কালাবিবি দীঘির মোড়। এখানে অল্প সময়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংক শাখাও খুলেছে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও। বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক নতুন শাখা স্থাপনে কাজ করছে এখানে।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা এসএম মঈন উদ্দিন আজাদ বলেন, আনোয়ারায় আগে থেকে প্রায় ২০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ছিল। এখন নতুন যুক্ত হয়েছে আরো ৩টি। সবার চোখ এখন টানেল সংযোগ সড়ক পয়েন্টে।

যোগাযোগ করা হলে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ও কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, টানেল চালুর আগেই জীবনযাত্রার মান বেড়ে গেছে আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর। এখন অনেকটা শহরে রূপ নিচ্ছে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!