চট্টগ্রামে নারী—মদের ‘রঙ্গমঞ্চ’ এসআই হেলালের, রেলের জায়গা দখলে ‘ভাড়া ঘর’ বাণিজ্য

১৯৯৬ সালে কনস্টেবল পদে পুলিশে চাকরি নেন কুমিল্লার ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন। কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে হন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। আর সেই পদোন্নতির পর গড়ে তুলেন অপরাধের সাম্রাজ্য। মাদক বাণিজ্য, সরকারি জায়গা দখল, মানুষকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পাহাড়তলী থানায় থাকাকালীন সময়ে এসব ছিল তাঁর রুটিনে কাজ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরের পাহাড়তলী থানাধীন বণিকপাড়ার ফকির বাড়ির সেলিমের বিল্ডিং নামের একটি পাঁচতলা বাড়িতে এসআই হেলাল গড়ে তুলেন এক ‘রঙ্গমঞ্চ’। সেই ভবনে প্রতিদিনই জমে নারী ও মদের আসর। আর জুয়াতো আছেই। এই রঙ্গমঞ্চের নিয়ন্ত্রণ করতেন এক সময়ের পাহাড়তলী থানার কথিত ক্যাশিয়ার, পুলিশের সোর্স ও সেলিমের বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিকপাড়া ফকির বাড়ির স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এসআই হেলালের তত্ত্বাবধানে থাকায় আমরা ভয়ে কিছুই বলতাম না। একবার আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে সোর্স ও বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরকে বাধা দিলে তিনি ইয়াবার মামলায় জেল খাটাবে বলে হুমকি দেন। তাই আমরাও ভয়ে কিছুই বলতাম না।

এদিকে নগরের পাহাড়তলী থানার সিডিএ মার্কেটের পেছনে রেললাইনের পাশঘেষাঁ বস্তিগুলোতে চলে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। সেই মাদকস্পট থেকে নিয়মিয় চাঁদা তোলারও অভিযোগ পাওয়া যায় এসআই হেলালের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, রেললাইনঘেষাঁ বস্তির মাদক সম্রাজ্ঞী জাকির মিস্ত্রি ও মিলনির মেয়ে মুন্নি, জাহানারা, পারভিন, ফাতেমা, রোজিনা—পাঁচজনই গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি করে। এদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন এসআই হেলাল। যার সিসিটিভি ফুটেজও সংরক্ষিত আছে আলোকিত চট্টগ্রামের কাছে।

আরও পড়ুন: ‘পুলিশের চাঁদাবাজি’ তরুণ—তরুণীকে হোটেলে বেঁধে টাকা নেন এসআই হেলাল

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাদক ব্যবসায়ী মিলনি থেকে চাঁদা আদায় করছেন এসআই হেলাল। মিলনি মারা যাওয়ার পরে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন তার মেয়ে মুন্নি ও তার জামাতা করিমের কাছ থেকে।

চোরা কাশেম নামে এক ব্যক্তি ওই এলাকায় মাদকের বড় ডিলার। এ চোরা কাশেম থেকে মাদক কিনে ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা।

একই এলাকার গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রেতা করিম, আলী, মাইল্লা থেকেও নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন এসআই হেলাল।

পাহাড়তলীর নিউ শহীদ লাইন বিহারি কলোনি এলাকায় এসআই হেলালের রয়েছে আনুমানিক ৩৫টি ভাড়া ঘর। যা রেলওয়ের সম্পত্তি। এই জমি একসময় দখলে ছিল ওই এলাকার নামকরা মাদক ব্যবসায়ী মুন্সির। মুন্সিকে মামলার ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য দিয়ে সে জায়গা দখলে নেন হেলাল। সে কলোনি ‘হেলাল দারোগার কলোনি’ নামে পরিচিত।

পাহাড়তলীর নোয়াপাড়া এলাকার নাছিমা বেগম বলেন, এ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন এসআই হেলাল। মাদক ব্যবসায়ী পারভীন গলা উচিঁয়ে বলেন, ‘এসআই হেলাল আমাদের পাশে আছে, তোরা কেউ কিছুই করতে পারবি না।’

তিনি আরও বলেন, এ এলাকা থেকে মাদক উচ্ছেদ করতে আমি নানা হয়রানির শিকার হয়েছি। কিন্তু আমি মাদকের বিরুদ্ধে বরাবরই বিদ্রোহ করে আসছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তারেক আহম্মদ বলেন, হেলাল উদ্দিন আগে থানার এসআই ছিল। হঠাৎ ট্রাফিকে এসে নানা ঝামেলা শুরু করে। এজন্য তাকে দিয়ে ডিউটি করাই না। কারণ সে আমার কোনো কাজেই আসছে না। আবার তার বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ আপনার কাছ থেকে শুনলাম। সে যদি এমন অনৈতিক কাজ করে থাকে, তাহলে আমার বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!