‘পুলিশের চাঁদাবাজি’ তরুণ—তরুণীকে হোটেলে বেঁধে টাকা নেন এসআই হেলাল

অনুসন্ধানের চোখ—১

ছিলেন থানা পুলিশের এসআই। কিন্তু নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় তাঁকে বদলি করা হয় ট্রাফিক বিভাগে।

কথায় আছে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে। ট্রাফিক পুলিশে বদলি হয়েও থামেনি তাঁর চাঁদাবাজি। সম্প্রতি হোটেলে তরুণ-তরুণীকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

আলোচিত এই পুলিশ কর্তার নাম হেলাল উদ্দিন। থানার এসআই থেকে যাঁকে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের পশ্চিম ট্রাফিক বিভাগের সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে বদলি করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬ সালে পুলিশে নিয়োগ পেয়ে এটিকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন। গড়ে তুলেছেন অপরাধের সাম্রাজ্য। মাদক বাণিজ্য, দেহ ব্যবসা ও জুয়ার আসরের সঙ্গে তিনি জড়িত। পাশাপাশি সরকারি জায়গাও দখল করেছেন তিনি। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় তাঁর রোজকার রুটিন।

অবশ্য মুখে তিনি সবসময় বলেন, তিনি হারাম খান না। কথাবার্তার ফাঁকেই জানিয়ে দেন, চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার তাঁর আত্মীয়। তাই চাইলে তিনি অনেককিছুই করতে পারেন। এভাবে ভয় দেখান খোদ তাঁর সহকর্মীদেরও!

জানা যায়, হেলাল কয়েক বছর পাহাড়তলী থানায় কর্মরত ছিলেন। সেই সময়ে পুলিশের চাকরিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গড়ে তুলেন অপরাধের বিশাল সাম্রাজ্য। নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে শেষে তার স্থান হয় ট্রাফিক পুলিশে। কিন্তু সেখানেও থেমে নেই চাঁদাবাজি।

জানা যায়, গত ১০ আগস্ট নগরের আকবরশাহ থানাধীন কৈবল্যধাম মোড়ে হোটেল রয়েল টাইম আবাসিক হোটেলে আসেন দুই তরুণ-তরুণী। সেই সময় ওই মোড়ে ডিউটিতে ছিলেন হেলাল। ওই দুই তরুণ-তরুণীকে হোটেলে উঠতে দেখে পিছু নেন হেলাল। একপর্যায়ে হোটেলে ঢুকে ওই তরুণ-তরুণীকে জিম্মি করে দুই হাজার টাকা আদায় করেন।

পরে হোটেল ম্যানেজার জানতে পারেন তিনি থানার পুলিশ নন। তখন তাকে আটক করে হোটেল কর্তৃপক্ষ। তৎক্ষনাৎ থানায় ও ট্রাফিক অফিসে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে এসআই হেলালকে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের পশ্চিম বিভাগ।

এদিকে তরুণ-তরুণীকে জিন্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন হোটেল মালিক ও এসআই হেলাল। এ বিষয়ে জানতে হোটেল রয়েল টাইমের মালিক মো. সম্রাট আলেকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এসআই হেলাল হোটেলে যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা পরে তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসে সমাধান করেছে।

অপরদিকে অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন এসআই হেলাল। তিনি বলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষই আমাকে দিয়ে ওই তরুণ-তরুণীকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৈবল্যধাম এলাকার এক স্থানীয় ব্যবসায়ী আলেকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্রতিদিনের মতোই এসআই হেলাল ডিউটি করছিলেন কৈবল্যধাম এলাকায়। হঠাৎ দেখি পুলিশের গাড়ি ওই হোটেলের সামনে। পরে খবর পাই থানার পুলিশ পরিচয় দিয়ে হেলাল তরুণ-তরুণীকে হোটেল কক্ষে জিন্মি করে চাঁদা আদায় করেছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তারেক আহম্মদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, হেলাল উদ্দিন আগে থানার এসআই ছিল। হঠাৎ ট্রাফিকে এসে নানা ঝামেলা শুরু করে। এজন্য তাকে দিয়ে ডিউটি করাই না। কারণ সে আমার কোনো কাজেই আসছে না। আবার তার বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ আপনার থেকে শুনলাম। সে যদি এমন অনৈতিক কাজ করে থাকে তাহলে আমার বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!