চট্টগ্রামে কারাবন্দীর মৃত্যুতে জেল সুপার—ওসির বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করবে পিবিআই

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রুবেল দে’র মৃত্যুর ঘটনায় স্ত্রী পূরবী পালিতের করা মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আগামী ২৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার (৩ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ বেগম জেবুনেনেছার আদালত এ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অভিযুক্তদের বেশিরভাগ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী হওয়ায় প্রাথমিক সত্যতা ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা গ্রহণের আদেশ সমীচীন হবে না। তাই পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নির্ণয় করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ২৭ মার্চ জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক সত্যতা নির্ণয় করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত।

আরও পড়ুন : রুবেলের সঙ্গে মায়ের শেষ কথা—২ লাখ টাকা দিতে হবে, নয়ত মেরে ফেলবে

এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি একই আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলার আবেদন করেন নিহতের স্ত্রী পূরবী পালিত। মামলায় আসামি করা হয় বোয়াখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আছহাব উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম, এসআই এসএম আবু মুসা, এএসআই মাঈন উদ্দিন, এএসআই মো. সাইফুল ইসলাম, কনস্টেবল কামাল ও আসাদুল্লাহ, এসআই রিজাউল জব্বার, বোয়ালখালী থানার ডিউটি অফিসার, চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মু. মঞ্জুর হোসেন, জেলার মো. এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, মো. আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন ও ইব্রাহিম এবং কারাগারের পদ্মা ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মাস্টারসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে।

মামলা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি দুপুর ৩টার দিকে বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ জৈষ্ঠপুরা ৯ নম্বর ওয়ার্ড ৮ নম্বর শ্রীপুর খরণদ্বীপ বেনী মাধবের বাড়ি থেকে বোয়ালখালী থানা পুলিশের একটি দল রুবেলকে আটক করে। এদিন রাত ৯টার দিকে পারিবারিক ফোন নম্বরে কল করে রুবেলের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। না হলে ৫০০ লিটার মদ উদ্ধারের মামলা সাজিয়ে তাকে আদালতে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু রুবেলের পরিবার চাহিদামতো টাকা দিতে পারেনি।

এরপর বোয়ালখালী থানার এসআই এসএম আবু মুসা বাদী হয়ে ২০০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধারের মামলা করেন রুবেলের বিরুদ্ধে। মামলায় সাক্ষী রাখা হয় বোয়ালখালী ৫ নম্বর ইউপি সদস্য মো. হাসান চৌধুরী ও দক্ষিণ জৈষ্ঠপুরা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদার জয় চক্রবর্তীকে। পরদিন এসআই রিযাউল জব্বার আদালতে নিয়ে যান রুবেলকে। ২৮ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশে রুবেলকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে রুবেলের শরীরে আঘাতের বিষয়টি গোপন করে তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। একইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে তাকে আহত অবস্থায় কারাগারে নেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২ ফেব্রুয়ারি স্বজনরা কারাগারে রুবেলকে দেখতে যান। সেদিন হুইলচেয়ারে করে স্বজনদের সামনে রুবেলকে আনা হয়। এসময় রুবেলের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান স্বজনরা। এ বিষয়ে কারারক্ষীদের কাছে জানতে চাইলে তারা সদুত্তর না দিয়ে রুবেলের স্বজনদের তাড়িয়ে দেন।

এরপর কারাগার থেকে ফিরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আইনজীবীর মাধ্যমে রুবেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করে পরিবার। তবে সেই আদেশ আসার আগেই ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে রুবেলের মৃত্যু সংবাদ আসে পরিবারের কাছে। এসময় জানানো হয়, রুবেলের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!